বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকারকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। সরকার নমনীয় রয়েছে। আপনারা যাতে সমগ্র বাংলাদেশে সমাবেশ করতে পারেন সে বিষয়ে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করেছে। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ২১ আগস্ট বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে আমাদের নেত্রীকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার দিন ১০ ডিসেম্বর কেন বিএনপির সমাবেশ' শীর্ষক এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।

হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করবে। তাদের সমাবেশ করতে দিচ্ছি, কোনো জায়গায় একটা পটকাও ফাটে না, এটা সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বলে সম্ভব হয়েছে। আপনাদের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব থেকে বড় জনসভা হয়েছে এবং হয়, আমাদেরও হয়, আপনাদের সেখানে যেতে এত অনীহা কেন?

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মিশন শুরু হয়েছিল। এদিন সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে যায়। যাদেরকে পরে হত্যা করা হয়। এই ১০ ডিসেম্বরকে কেন বিএনপি সমাবেশের জন্য বেছে নিল সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের অনেকে এখন বিএনপির নেতা। এ দিনটাই তারা বেছে নিয়েছে কারণ তারা নিজেরাই হত্যাকারী। তাদের সঙ্গে আবার নতুন করে সংহতি প্রকাশ করার জন্যই এ দিনটি বেছে নিয়েছে বিএনপি।
 
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কয়দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাকিস্তানই ভালো ছিল। যে দলের মহাসচিব পাকিস্তানই ভালো ছিল এ কথা বলে তার আসলে এদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। 

তিনি আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারা সমাবেশ করতে চায় না, কারণ সেখানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল। এই উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন এবারের সংগ্রম মুক্তির সংগ্রাম। সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের সমাবেশ করতে এতো অনীহা। কারণ তারা তো পাকিস্তানের দোসর।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, উনারা নাকি ১০ লাখ মানুষের  সমাবেশ করবে। নয়াপল্টনের সামনে মানুষ হবে ৩০ থেকে ৫০ হাজার। সেটি তারা রাস্তায় করতে চায়। আরেকটি কারণ হচ্ছে, রাস্তায় করলে গাড়ি ঘোড়া ভাংচুর করা যাবে, অগ্নি সংযোগ করা যাবে, শহরে যানজট সৃষ্টি করা যাবে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যাবে। 

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তাদের এই কাজ করতে দেবো না। ঢাকা শহরে বিশৃঙ্খলা করবে, সারা বাংলাদেশ থেকে অগ্নি সন্ত্রাস জড়ো করে এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লাইসেন্স তাদের দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের কর্মীদের আহ্বান করেছিলাম ধৈর্য ধরার জন্য, কিন্তু তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমাদের কর্মীদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটা ওয়ার্ডে সর্তক অবস্থানে থাকবে। 

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সংগীত শিল্পী রফিকুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, কৃষকলীগের সহ সভাপতি শেখ জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দ সৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী, অভিনেত্রী রোজিনা, তানভিন সুইটি, অরুণা বিশ্বাস এবং শমী কায়সার। মানববন্ধন পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা।

এমএসআই/এফকে