আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় ছাত্রলীগ। সম্মেলন ঘিরে এখন সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে বয়সসীমার বিষয়টি।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। বিগত তিন কমিটির সম্মেলনে প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ২৯ বছর রাখা হয়। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো সেশনজট নেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সবাই শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছেন, এজন্য বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৯ বছর রাখা হয়।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বয়সের ব্যাপারটি অনানুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি উপস্থিত নেতাদের জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বয়সের ব্যাপারে তার আলোচনা হয়েছে। এবারও বয়সসীমা হবে ২৯ বছর। এটা বাড়ানো হবে না।

বয়সসীমা শেষ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব ২৯ চূড়ান্ত হলে কপাল পুড়বে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের। নেতৃত্বে চলে আসতে পারেন তুলনামূলক জুনিয়র নেতারা

অন্যদিকে, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী তাদের কাছে পদপ্রত্যাশীদের বয়সসীমা ও ছাত্রত্বের ব্যাপারে খোঁজ নেন। গত সম্মেলনের মতো এবারও বয়সসীমা ২৯-এর প্রতি সমর্থন জানান তিনি। তবে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেই কেবল বয়সের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

আরও পড়ুন >> ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন?

বয়সসীমা শেষ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব ২৯ চূড়ান্ত হলে কপাল পুড়বে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের। নেতৃত্বে চলে আসতে পারেন তুলনামূলক জুনিয়র নেতারা— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ / ছবি- সংগৃহীত

বয়সের কারণে বাদ পড়ার শঙ্কায় আছেন যারা

বয়স ২৯ হলে নেতৃত্ব বঞ্চিত হবেন সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

এ তালিকায় চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল; বরিশাল অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ, ফরিদপুর অঞ্চল থেকে সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মুহাম্মদ; উত্তরবঙ্গ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু; খুলনা বিভাগ থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন এবং ময়মনসিংহ থেকে কেন্দ্রীয়  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস।

আরও পড়ুন >> প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ জয়-লেখক!

নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন যারা

বয়স ২৯ এর বেশি না রাখলে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন তুলনামূলক অনেক জুনিয়র নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, সহ-সম্পাদক দিদারুল আলম; বরিশাল অঞ্চল থেকে রয়েছেন- সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-সম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও উপ-গণশিক্ষাবিষয়ক উপ সম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না, কর্মসংস্থানবিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।

আরও পড়ুন >> বিতর্কিত-বহিষ্কৃতরাও ঢাবির হল শাখা ছাত্রলীগে

মাদারীপুর অঞ্চলের মধ্যে রয়েছেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি-উস সানি, উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসেন, ঢাবির হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হলের সভাপতি শহিদুল হক শিশির; খুলনা অঞ্চলের মধ্যে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আহসান হাবিব।

এছাড়া ময়মনসিংহ থেকে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়, উপ-প্রচার সম্পাদক সুরাপ মিয়া সোহাগ, সহ-সম্পাদক রাকিব সিরাজীর নাম রয়েছে আলোচনায়। এর বাইরে রয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণাবিষয়ক উপ-সম্পাদক রনক জাহান রাইনের নাম।

আরও পড়ুন >>এটা কোন ছাত্রলীগ, জয়-লেখককে কাদের

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সের ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। বিভিন্ন কারণে সেটি বাড়ানো হয়ে থাকে। গত কয়েকটি সম্মেলনে বয়স ২৯ বছর রাখা হয়েছে। এবারও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রার্থীর একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, বিতর্কমুক্ত কি না— এসব বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

এইচআর/এমএআর/