বর্তমানে নয়পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ছয়তলা বিশিষ্ট এ কার্যালয়টির নিচের কলাপসিবল গেটের সামনে বেশ কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তারা কাওকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এছাড়া ভেতরে থাকা নেতাকর্মীদের লাইন ধরে একে একে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে। 

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কলাপসিবল গেটের সামনের ফুটপাাতে বসে আছেন। এসময় বিএনপি কার্যালয়ের গেটের সামনে সাদা পোশাকে পুলিশ এবং ডিএমপি লেখা জ্যাকেট পরিহিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং নেতাকর্মীদের বের করে এনে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। 

সন্ধ্যা সাতটা ১৫ মিনিটের দিকে কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বের করে এনে প্রিজন ভ্যানে তুলতে দেখা যায়। এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচের খালি জায়গায় অর্ধ রান্না করা খিচুড়ি পাওয়া যায়। পাশাপাশি মূল সড়কে কয়েক বস্তা চালসহ একটি কাভার্ড ভ্যান পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে, সমাবেশ উপলক্ষে নেতাকর্মীরা চালগুলো নিয়ে এসেছে।

বর্তমানে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ সদস্য উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া দুটি প্রিজন ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএনপির কার্যালয় থেকে পশ্চিম দিকে কাকরাইল মোড় ও পূর্ব দিকে ফকিরাপুল মোড় বেরিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ।  

অন্যদিকে বিএনপির কার্যালয়ের আশপাশে লোকজনকে জড়ো হতে দেখলে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, পুলিশ কার্যালয়ের ভেতর অভিযান চালিয়ে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন রুমের দরজা ভাঙচুর করেছে। এছাড়া তারা দলের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিটিয়ে ফেলে দেয়। 

এদিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটা পার্টি অফিসের সামনে এভাবে পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা ও আমাকে অফিসে ঢুকতে না দেওয়া অন্যায়। এটা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না।

অনুমতি নিয়ে ঘটনাস্থলে আসলেও তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে পার্টি অফিসে এসেছি। তবুও আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের দুজন ছাত্রনেতা শহীদ হয়েছেন। আমি যখন এখানে আসি তখন দেখি পুলিশ গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। তখন ভেতরে ঢুকতে গেলে আমাকে কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে এখানে আটকে রাখা হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের ৫০০ এর বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ নেতারাও আছেন। আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, শহীদুজ্জামান চৌধুরী এ্যানি, রুহুল কবির রিজভী ও শিমুল বিশ্বাসসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘন এবং গণতন্ত্রের প্রতি চরম একটা বাধা। 

নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, সেই সমাবেশ যেন শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারি তার জন্য সব ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। আজকের ঘটনায় যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। 

তার বক্তব্যের পর আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।

এএইচআর/কেএ