বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে। তারা নিজেরা ব্যাগে করে কিছু বিস্ফোরক এনে কার্যালয়ে রেখেছে। এখন সেটার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোরপূর্বক ঢুকে পুলিশ যে অভিযান পরিচালনা করেছে সেটা পৈশাচিক ও সংবিধানবিরোধী।

বুধবার রাতে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা বর্বরোচিত পৈশাচিক, নারকীয় ও মর্মান্তিক ঘটনা। আমি মনে করি, কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এভাবে অভিযান পরিচালনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এটা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন করার শামিল। এটা গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। এর থেকে খারাপ কাজ কিছু হতে পারে না। আমার ভাষা নেই বলার। আই অ্যাম শক লাইক এনিথিং টুডে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। 

এর আগে বিকেল ৫টায় মির্জা ফখরুল বিএনপি অফিসে প্রবেশ করতে গেলে তাকে পুলিশ বাধা দেয়। কার্যালয়ের গেট বন্ধ করে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এ অভিযান শুরু করেন। এ সময় মির্জা ফখরুল একাধিকবার পুলিশ কর্মকর্তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তাকে তার অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য বললেও তারা সাড়া দেননি।

বিএনপি মহাসচিব কর্মকর্তাদের বলেন, আমি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। আপনি কথা বলুন। আমাকে যেতে দিন। পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেন, স্যার দেখছি। পরে বিএনপি মহাসচিব ফুটপাতে বসে পড়েন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যেভাবে অভিযান চালানো হয়েছে, আগেও একইরকম ঘটনা ঘটেছে। আগে যারা অভিযানে ছিলেন আজকেও তাদের দেখা গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই ভয়াবহ নির্যাতন, অসহায় গণতন্ত্রকামী মানুষগুলো আজকে দেখছেন কীভাবে নিয়ে যাচ্ছে। এটাকে কী বলব। এটার জন্য আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?

পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, আপনারা এই অসহায় মানুষগুলোকে এভাবে ধইরেন না। এটা ঠিক নয়। দিস ইজ টু মাচ।

এক পর্যায়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্লিজ আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে অফিসে যেতে দিন। দেশটা আমাদের সকলের। এভাবে আপনারা রেইট করতে পারেন না। পলিটিকাল পার্টি অফিসে এভাবে রেট কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেলা তিনটা দিকে পুলিশ রাবার বুলেট দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আমাদের অফিস আক্রমণ চালায়। এরপর আমি যখন এখানে এসে প্রবেশ করতে চাই, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে এখানে আটকে রাখা হয়। এখন পর্যন্ত  দুই ছাত্রনেতা শহীদ হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আই টক টু ডিএমপি কমিশনার, আই টক টুক হোম মিনিস্টার। কোনো লাভ নেই। ইনফেক্ট এখানে দেয়ার ইজ নো গর্ভমেন্ট, দেয়ার ইজ নো স্টেট হিয়ার।

তিনি আরও বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি পালন করে আসছি। আপনারা জানেন যে, আমরা বিভিন্ন দাবিতে ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ করেছি। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহণ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের মন্ত্রীরা উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

তাদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খেলা হবে। আরেকজন মন্ত্রী বলেন যে, হেফাজতের মতো সাফ করে দেওয়া হবে। 
ভয়াবহ সব উক্তি, সমস্ত কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম এবারও তারা আন্দোলনকে দমন করে দিতে চায়।

ফখরুল বলেন, এ অভিযান শুধু বিএনপিকে ক্ষতি করেনি, সমস্ত বাংলাদেশে মানুষের বুকে আঘাত হেনেছে। একই সঙ্গে তারা গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সেই ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আজকে দেখেছি যে, কারা কারা এ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কোন কোন বাহিনী এখানে এসেছে। কীভাবে পাশবিক নারকীয় তাণ্ডব তারা চালিয়েছে তা বর্ণনা করা যায় না। সে ভাষা আমার নেই।

ফখরুল বলেন, আমার সামনে আমাদের অফিসের সব কম্পিউটার, যতরকম ডকুমেন্ট আছে সব তারা নিয়ে গেছে। সব সিসি ক্যামেরাগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে। বিদ্যুতের লাইট ভেঙে দিয়েছে যাতে করে কোনো অ্যাভিডেন্স দেখা যায়। 

এএইচআর/এসকেডি