বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পর দলটির অন্যান্য নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা বিরাজ করছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, আজকে যারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি হয়েছি, তারা আগামীকালের সমাবেশ মঞ্চে থাকতে পারব কি না তার শঙ্কা রয়েছে। সরকার আমাদের দুই নেতার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছে, আমাদের ক্ষেত্রে তেমনটা হতে পারে।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর ) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আশঙ্কার কথা জানান। 

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সমাবেশে উপস্থিতি যাতে কম হয় সেজন্য সরকার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আর একটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করেছে তারা, সেটি হলো আলোচনার কথা বলে তাদের (মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস) নিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে আগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আজকে এই সারিতে আমাদের যাদেরকে দেখছেন, কালকে সমাবেশের মঞ্চে গেলে আপনারাও হতাশ হতে পারেন। অনুরূপ কাণ্ড সরকার আমাদের সঙ্গে করতে পারে এই আশঙ্কাও আছে। তারপরও জনগণের জনসভা তারাই সফল করবে।

কালকের গণসমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা মির্জা আব্বাস ও প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল আটক, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ, নয়াপল্টন এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবরুদ্ধ রেখেছে। শেষ পর্যন্ত সরকারের কথায় কি আপনারা গোলাপবাগ সমাবেশ করছেন, না কি নিজেদের পছন্দ জায়গায় করছেন, দলের নেতাকর্মীদের আগামীকাল কী বার্তা দেবেন? এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গোলাপবাগ পুলিশের দেওয়া স্থান নয়, আমাদের প্রস্তাবিত স্থান। গতকাল রাতে মির্জা আব্বাস পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে এই মাঠের প্রস্তাব দিয়ে গেছেন। আজ আমাদের দলের একটি প্রতিনিধি দল লিখিত আকারে সেটির আবেদন করেছে, তারই  পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশের প্রধান অনুমতি দিয়েছেন। 

আপনারা অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন ডিএমপি কমিশনার বরাবর, কিন্তু অনুমতি দিয়েছেন ডিবি প্রধান, এ বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিবি প্রধান বলেছেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গণসমাবেশে প্রধান অতিথি এবং সভাপতিত্ব কে করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ এখন আর আমাদের বিএনপির নয়, এটা জনগণের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। কাজেই সমাবেশে কে থাকলাম আর কে থাকলাম না সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ জনগণ শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের গণসমাবেশ সফল করবে।

ঢাকাসহ সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে মহড়া দেওয়া হচ্ছে, গণসমাবেশে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কে নেবে? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ সফল করতে প্রস্তুত। কিছু করলে সরকার করবে, সেক্ষেত্রে দায়ভার সম্পূর্ণ সরকারের।

ঢাকাবাসীসহ যারা আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে আন্দোলনে শরিক হবেন, তাদের সবাইকে গণসমাবেশে উপস্থিত হয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, গণসমাবেশে আমরা দশ দফা ঘোষণা করব। আশা করি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দশ দফা সমর্থন করবে এবং যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎভাবে অংশগ্রহণ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আরও অনেকে। 

এএইচআর/কেএ