যুদ্ধের অনেক আগেই ভাসানী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন: ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ‘১৯৭১ সালের সম্ভবত ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে একটি জনসভায় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন গণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার ঘোষণা করেছিলেন। এই অপরাধে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার আদালতে তাকে কারাদণ্ড প্রদান করেন। পুরো যুদ্ধকালে তিনি আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৭ তারিখে মুক্ত হন।’
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় ৯ মার্চ ১৯৭১ উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, যে কয়জন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য অনেক আগে থেকেই কথা বলেছেন তাদের একজন আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মূল লক্ষ্যই হলো এই সত্য ইতিহাসকে সামনে নিয়ে আসা। তরুণ প্রজন্মকে এসব সত্য ইতিহাস জানানো। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই কাউকে ছোট করা বা কোনো নেতাকে ছোট করা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মূল লক্ষ্য নয়।
বিজ্ঞাপন
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, একজন মানুষের কথা ও নির্দেশে এক মুহূর্তে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে সেটা ঠিক নয়। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এক ঘোষণায় বা কথায় দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বছরের পর বছর দিনের পর দিন যারা সংগ্রামের মাধ্যমে আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন তাদেরকেই আজ আমরা স্মরণ করি না। এসব নেতাদের মধ্যে অন্যতম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তার বিষয়ে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি একজন কিংবদন্তি নায়ক। রাজনীতিতে একটি জাদুকরি যে বিষয় আছে, যেটা সেটা ভাসানীর মধ্যে পাবেন।
বিজ্ঞাপন
ভাসানী নাম কেন হয়েছে প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন আসামের নির্যাতিত কৃষকদের পক্ষে আন্দোলনের জন্য সারাদেশে ছুটে বেড়াতেন। তখন মোটরসাইকেল ছিল না, একটি ঘোড়া নিয়ে তিনি এখানে-সেখানে যেতেন। কিছুক্ষণ পরপর ৫০ মাইল দূরে আরেক জায়গায় গিয়ে বক্তৃতা দিতেন, মানুষকে সংঘবদ্ধ করতেন। মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতনকারী জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। তিনি পাকিস্তানের পক্ষে বৃটিশ থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য লড়াই করেছেন সংগ্রাম করেছেন। আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তার আগে কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। আজীবন তিনি খেটে খাওয়া মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমানের খেতাব তুলে নেওয়ার সঙ্গে তার কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, শহীদ জিয়া এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছে ও থাকবেন। তিনি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি চেয়রাম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ৭ই মার্চ সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সমগ্র দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতকে সামনে রেখে যা যা বলেছিলেন, যে ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন সম্ভবত সেটাই ছিল সব চাইতে বাস্তব সম্মত, সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ। সেদিন কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়েছিল, কেন রেসকোর্সের ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন না। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সঠিক কাজটি তিনি করেছিলেন। কারণ তিনি প্রকৃত অর্থেই একজন বিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তাই তিনি বাল্যখিল্যতার কাছে আত্যসমর্পন করেননি। আর তাই অনেক ভারসাম্যের কথা চিন্তা করে তাকে সে দিন বক্তব্য রাখতে হয়েছিল।
৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করেছিলেন, একটি ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে ঝাপ দিয়ে পরার মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।
এএইচআর/ওএফ