জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য (এমপি) হারুনুর রশীদ। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় সংসদে এসে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। 

পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার পর হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে দেশ আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। জাতীয় সংসদে এখন কোনো বিরোধী দল নেই। 

তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় সংসদে বিএনপির সাতজন এমপি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি দেশের বাইরে থাকার কারণে আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। আমি গতকাল (বুধবার) রাতে দেশে এসেছি এবং আজ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা অবগত আছেন, বর্তমানে দেশ আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। এখন এই জাতীয় সংসদ মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। কারণ জাতীয় সংসদে এখন কোনো বিরোধী দল নেই। এটি একদলীয় সংসদ। সংবিধান ও কার্যপ্রণালীতে এ ধরনের সংসদের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, বর্তমানে রাষ্ট্রকে যেভাবে পরিচালনা করছে, যদি এভাবে পরিচালনা করতে হয় তাহলে সংবিধান এবং আইনের পরিবর্তন আনতে হবে।

হারুন বলেন, আপনারা জানেন; কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান কার্যালয়ে যে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছে, এটি একটি গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আজকে পার্টির মহাসচিব, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, জঙ্গি ও নাশকতার মামলা দিয়ে তাদেরকে আটক রাখা হয়েছে। যেটা আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। সুতরাং আজকে যদি বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হয় এবং সত্যিকার অর্থে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সভা, সমাবেশ, মত প্রকাশে যে স্বাধীনতা রয়েছে, সংবিধানের যে অধিকার রয়েছে, সেটি যদি সরকার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে অবিলম্বে এই সংসদকে বাতিল করতে হবে। 

এদিকে এর মধ্য দিয়ে বিএনপির দলীয় সব সংসদ সদস্যের পদত্যাগ নিশ্চিত হলো। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন ও জিএম সিরাজ।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির ছয়জন সদস্য। সেদিন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিলেও এমপি হারুন বিদেশে থাকায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি স্পিকার।

সেসময় স্পিকার বলেছিলেন, এমপি হারুনুর রশিদ বিদেশে থাকায় অনুপস্থিত রয়েছেন এবং এর মধ্যে আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় সংসদ সচিবালয় তার সই  মিলিয়ে দেখবে ও কথা বলবে। সব ঠিক থাকলে তার আবেদনও গৃহীত হবে। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগ পত্র দেওয়ায় হারুনুর রশীদের আবেদন গ্রহণ হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে আজ সশরীরে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিলেন এমপি হারুন।

গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ই-মেইল যোগে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠান বলে বিএনপির সাত এমপি। তারা হলেন—আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), হারুনুর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪), জি এম সিরাজ (বগুড়া-৭), আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) ও রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)।

এরপর ১১ ডিসেম্বর দুপুরে শূন্য ঘোষিত ওই ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটির সদস্য সশরীরে গিয়ে স্পিকারের কাছে ছয়জনের পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে এমপি হারুন ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠানোয় সেদিন তার আবেদন গ্রহণ করেননি স্পিকার।

এসআর/কেএ