একাদশ সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তি শুক্রবার। পূর্ব-ঘোষণা অনুযায়ী এদিন রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোর প্রথম যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ‘গণমিছিল’।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পৃথকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে গণমিছিল ও সমাবেশ করবে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। এসব দল ও জোটের পক্ষ থেকে আগামীতে এক দিনের অভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণাও আসতে পারে।

আরও পড়ুুন>>‘জেগে ওঠা’র বছর বিএনপির, শেষ ধাক্কা ফখরুলে

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। কারাবন্দিদের মুক্তি, ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গণ-অবস্থান ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এসব কর্মসূচি আসতে পারে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের ঐক্যবদ্ধ রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, শরিকদের সামনে আগামীতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা লোভনীয় প্রস্তাব আসবে। এজন্য বিএনপিকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতি রাখতে হবে। এছাড়া এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হবে। এ সময় শরিকদের প্রতি সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। 

এ কারণে বিএনপির এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে নতুন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা এবং আগামী মার্চের মধ্যে এর একটা রূপ দেওয়া— বলেন নেতারা।

আরও পড়ুন>>বিএনপির রূপরেখা : ‘ইতিবাচক’ হলেও ‘সন্দিহান’ তারা

যুগপৎ আন্দোলনের বড় শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ। শুক্রবার বেলা ১১টায় তারা গণমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এটা নিয়ে কিছুটা ‘অস্বস্তি’ রয়েছে বিএনপির মধ্যে। দলটির নেতারা বলছেন, গণমিছিল শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে একটা কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। এখন বেলা ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের কর্মসূচি শেষ করে যদি নতুন কর্মসূচির ডাক দেয় তাহলে বিএনপির ঘোষণা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা গুরুত্ব হারাবে। যেহেতু গণতন্ত্র মঞ্চ আগেই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে, ফলে এখন আর কিছুই করার নেই। তবে, তারা যদি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা না দেয় সেটা ভালো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার আমাদের গণমিছিলের কর্মসূচি। ইতোমধ্যে সরকার তাদের মাস্তানদের পাড়ায়-মহল্লায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা তো কোনো প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়নি। অতীতে সরকারের উসকানি, অত্যাচার-নির্যাতনের পরও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি আমরা। আগামীতেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব।

‘একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে নিরস্ত্র জনগণের ফাইট করা কঠিন কাজ। সেটা জেনে-শুনে আমরা রাজপথে নেমেছি।’

গণমিছিল শেষে কর্মসূচি দেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে টুকু বলেন, ‘এই আন্দোলন তো এক দিনেই শেষ হয়ে যাবে না। আগামী দিনের কর্মসূচি অবশ্যই আসবে।’

আরও পড়ুন>>‘ভোট ডাকাতির বর্ষপূর্তি’র দিন গণমিছিল করবে বিএনপি-গণতন্ত্র মঞ্চ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুগপৎ এই আন্দোলনকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নেওয়াই এখন বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ। যারা এখনও এই আন্দোলনের বাইরে আছে তাদেরও সঙ্গে করে এগিয়ে যেতে হবে আগামীতে। সেটা করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতি রাখতে হবে। এই আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় তখনই আসবে যখন সবাই একদিকে থাকবে আর সরকার একলা একদিকে থাকবে।

সরকারের পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবিতে শুরু হতে যাওয়া এই যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান শক্তি হলো বিএনপি। দলটি শুক্রবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ করবে। গণমিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের জন্য ইতোমধ্যে ১১টি পয়েন্ট নির্ধারণ করে দিয়েছে দলটি।

এদিন বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোট দুপুর ৩টায় বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে থেকে শুরু করে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত গণমিছিল করবে। ১১ দলের সমন্বয় গঠিত ‘জাতীয় জোট’ দুপুর ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড় হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে গণমিছিল শেষ করবে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) তাদের অফিস-সংলগ্ন কারওয়ান বাজার এফডিসি মোড় থেকে গণমিছিল বের করবে। এটি মালিবাগ মোড় হয়ে নিজ কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হবে। এছাড়া ভোটাধিকার হরণ দিবস উপলক্ষে ‘কফিন বিক্ষোভ’ করবে গণঅধিকার পরিষদ।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এখনই রাজধানীতে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’। তারা চাচ্ছে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে এই আন্দোলনকে একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। এই সময়ের মধ্যে দেশের পরিস্থিতিও অনেক পরিবর্তন হবে। মূলত মার্চের পরই কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পক্ষ বিএনপি। আপাতত ‘গণ-অবস্থান ও প্রতিবাদ কর্মসূচি’ পালনের ইচ্ছা দলটির।

এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছি। অবিলম্বে একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের একটি ইশতেহারও ঘোষণা করব।

এক প্রশ্নের জবাবে সাকি বলেন, আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। সেটা চূড়ান্ত হলে ঘোষণা দেওয়া হবে।

এএইচআর/এমএআর/