আসন্ন রমজান পর্যন্ত ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বিএনপির চলমান যুগপৎ আন্দোলন। তবে রমজান মাসে ‘ইফতার রাজনীতি’ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে যাওয়ার আগে ঢাকায় বড় কর্মসূচির মাধ্যমে শোডাউন করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। কিন্তু এক্ষেত্রে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করতে চায় তারা। 

বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী ২৪ তারিখ থেকে রমজান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রমজানের আগে আরও দুই থেকে তিনটি মাঠ কর্মসূচি পালন করার সুযোগ থাকবে। এরপর রমজানে নিয়মতান্ত্রিক ইফতার রাজনীতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে চলে যেতে হবে। তাই আগামী ৪ মার্চ দেশের সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচির পরে আবারও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। 

রমজানের আগে আগামী ১৮ অথবা ২০ মার্চ ঢাকায় বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে। সেই কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটিয়ে বড় শোডাউন করারও পরিকল্পনা রয়েছে। 

তবে রমজানের আগে আগামী ১৮ অথবা ২০ মার্চ ঢাকায় বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে। সেই কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটিয়ে বড় শোডাউন করারও পরিকল্পনা রয়েছে। যার মাধ্যমে রমজানের পরে দাবি আদায়ে বিএনপি যে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে সরকারকে তার বার্তা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন>>‘বর্গী’দের মতো লুটের আসর বসিয়েছে আওয়ামী লীগ : ফখরুল

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলমান আছে। সেটা চলতে থাকবে। এই আন্দোলনের গতি ধাপে-ধাপে বাড়বে। সারাদেশের ন্যায় প্রতি সপ্তাহে ঢাকাতেও আন্দোলন হচ্ছে। আগামীতে ঢাকায় কখন কী আন্দোলন হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। আমাদের আন্দোলনের প্রধান শক্তি দেশের সাধারণ জনগণ। তারা বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। আগামীতেও নেবে। 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানের আগে আরও দুই থেকে তিনটি কর্মসূচি হবে। এক্ষেত্রে আগামী ১৮ মার্চ ঢাকায় বড় কর্মসূচি পালন করার চিন্তা আছে আমাদের। তবে এ কর্মসূচিতে এমন কিছু করার চিন্তা নেই যেটা গত ১০ ডিসেম্বরের মতো সরকার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে একটা বড় শোডাউন করা। 

আরও পড়ুন>>মানুষ বলছে আগে জানলে ভাঙা নৌকায় উঠতাম না : ফখরুল

দলটির নেতারা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ রমজান। তাই এবারের রমজান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আলাদা গুরুত্ব পাবে। সেটা বিএনপির ক্ষেত্রেও ভিন্ন নয়। ইফতারের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা দলগুলোর কাছে টানা ও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া এবারের রমজানে বিএনপি সারাদেশে সাংগঠনিক সফর করার একটা পরিকল্পনা রয়েছে।

তারা বলছেন, এই সফরে যেসব জেলা, বিভাগ, মহানগর, থানা ও উপজেলাগুলো দলের অভ্যন্তরে কী ধরনের সমস্যা আছে, সেটা অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কমিটি না হওয়া, নিষ্ক্রিয় থাকা, অন্য দলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। একইসঙ্গে সমাধান করা হবে। তবে রমজানে যদি এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেটার জন্য যদি মাঠ কর্মসূচি দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।   

আরও পড়ুন>>তত্ত্বাবধায়ক না এলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

সেলিমা রহমান বলেন, রমজান সব রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান নয়। যারা ক্ষমতায় আছে, তারা হয়তো নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে। কিন্তু আমরা তো আর এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। সেজন্য আন্দোলনে আছি। ফলে এই রমজানে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি আন্দোলনও হবে। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি কম থাকে। এখন রমজানে আমাদের দলের কী কর্মসূচি থাকবে সেটা নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। হলে বলতে পারব। 

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, নরম কিংবা গরম কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে বিএনপিকে তার লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। সেটা হচ্ছে বিএনপি আসলে কী চায়? এই সরকারের পতন নাকি ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতায় যেতে হলে আন্দোলনের পাশাপাশি যারা দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারা নিরাপদ থাকবে সেটার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

সূত্রটি আরও বলছে, আর সরকারের পতন চাইলে সেক্ষেত্রে নিজেদের সব চাওয়া-পাওয়াকে পাশে ঠেলে দিয়ে অন্যদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সেই আন্দোলন করতে হবে। একইসঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। এছাড়া দেশে বিএনপির নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদেরকে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। এমতাবস্থায় যদি কোনো কর্মসূচি স্থগিত করতে হলেও লন্ডন থেকে আসা অনুমতি জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে তো হবে না। 

এএইচআর/কেএ