>> দ্রুত সব কমিটি করতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশ
>> তিন সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে, জানে না কেউ
>> যুব মহিলা লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঈদের পর

গত বছরের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বারবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাগিদ দিয়েছিলেন। সংগঠনের দায়িত্বশীলরাও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু চার মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে পারেনি কোনো সংগঠন।

তবে এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগসহ অন্য তিন সংগঠনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলটির সিনিয়র নেতারা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ নভেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংগঠনটির নতুন সভাপতি করা হয় ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী, আর মহাসচিব করা হয় ডা. কামরুল হাসানকে। ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় মেহের আফরোজ চুমকিকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় শবনম জাহান শিলাকে।

গত ৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের ১৩ দিন পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে সভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ ওয়ালিদ আসিফ ইনানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়া ১৫ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় অধিবেশনে যুব মহিলা লীগের নতুন সভাপতি করা হয় ডেইজী সারোয়ারকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় শারমিন সুলতানা লিলিকে। এই চার সংগঠনের সম্মেলন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব আসার তিন মাস পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে পারেনি কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি জমা দিয়ে দেব। জমা দিলে আপনারা জানতে পারবেন।’

এদিকে গত জানুয়ারি মাস থেকেই চার সংগঠনের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তাগিদ দিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ২৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভায় এ বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাচিপের এখনো কমিটি করার উদ্যোগ নেই। ছাত্রলীগ এখনো কমিটি করেনি। সম্মেলনের কতদিন হয়ে গেছে। এরপর আমাদের মহিলা আওয়ামী লীগ। অফিসে যাওয়া যায় না, নারীদের লাইন এখনো আছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। তারপর যুব মহিলা লীগ, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। সহযোগী চারটি সংগঠনের সম্মেলন করেছি। এখন পর্যন্ত একটাও কমিটি পাইনি। যার যার সীমানা থেকে উদ্যোগ নেবেন। আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

শুধু সেই দিনেই শেষ নয়, এরপরও কয়েকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একই বিষয়ে তাগিদ দেন। সেই বৈঠকের আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।

জানতে চাইলে ডেইজী সারোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রেডি করা আছে। এখন শুধু জমা দেব। আমাদের সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ, সে সম্ভবত পায়ের চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছেন। তিনি ঘুরে এলে আমরা জমা দিয়ে দেব। আমরা আজ (শুক্রবার) দুইজনে বসে প্রাথমিকভাবে রেডি করেছি।’

তিনি আরও বলেন, আমি চাচ্ছি মেয়েরা যেন চেইন অব কমান্ড মানে। কমিটিতে এ ধরনের মেয়েদের রাখা হবে। কিছু কিছু মেয়েরা সিনিয়র হলেও অনেক সময় চেইন অব কমান্ড মানতে চায় না। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় একটু চেঞ্জ আনতে আজ বসেছিলাম। আমরা ৩/৪টি অনুষ্ঠান করেছি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিছু মেয়েদের আচার-আচরণ চোখে পড়েছে। সেই কারণে আজ বসে কীভাবে কী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।

ডেইজী সারোয়ার বলেন, মোটামুটি আমাদের কমিটি রেডি হয়ে গেছে। বেশকিছু নতুন মেয়ে আসছে। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী একটু খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। পারতপক্ষে আমরা এ বিষয়গুলো দেখছি। এ কারণে একটু সময় নিচ্ছি। কাদের ভাইও আমাদের কমিটি জমা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ঈদের আগে না হলেও ঈদের পরে জমা দিয়ে দেব।

দলীয় সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা জেলা-মহানগর, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকের বয়স চলে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করে ফেলো। কমিটি গঠনের সময় দুই বছর যেন বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে তা নিশ্চিত করেছে।

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে নাগাদ দেওয়া হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করব। দ্রুত কমিটি দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

এমএসআই/এসএসএইচ/এসকেডি