‘আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে বিএনপি ও তাদের যুগপৎ সঙ্গীদের মধ্যে। এর অংশ হিসেবে ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ৭ দফা’ শিরোনামে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি করেছেন বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিনিধিরা।

কিন্তু খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে আপত্তি আসে বিএনপির পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে খসড়া ঘোষণাপত্র থেকে ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি’ ধারাটি বাদ দেওয়ার দাবি করেন দলটির নেতারা। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র থেকে এটি বাদ দেওয়া হচ্ছে।

যৌথ ঘোষণাপত্র ও আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচির ধরন ঠিক করতে মঙ্গলবার (২ মে) বৈঠক করে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, খসড়া যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে বেশকিছু জায়গায় আপত্তি তোলে বিএনপি। এর মধ্যে তাদের ঘোরতর আপত্তি ছিল ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি’ ধারাটি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে এ ধারাটি বাদ দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খসড়া ঘোষণাপত্রের ৭ দফার সঙ্গে নতুন করে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ২৭ এবং গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা যুক্ত করে নতুন করে যৌথ ঘোষণা তৈরি করা হবে। সে লক্ষ্যে এখন নতুন করে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে আজকের বৈঠকে।

আগামীকাল (৩ মে) গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের বৈঠক আছে, সেখানে মঞ্চের পক্ষ থেকে যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে। তারপর মঞ্চের কমিটি ও বিএনপির প্রতিনিধিরা মিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণাপত্র তৈরি করে চলতি মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করি, দ্রুত সময়ের যৌথ ঘোষণাপত্রের ঘোষণা দেওয়া হবে। ঘোষণাপত্রের কিছু কাজ করা আছে, এখন অল্প সময়ের মধ্যে তা চূড়ান্ত করতে পারব। তারপর চলতি মাসের মধ্যে তা ঘোষণা করা হবে।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আমাদের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। মূলত বিএনপির পক্ষ থেকে এটা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। তাই এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। বলা চলে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
 
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, আজকের বৈঠকে আবার যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবার একটাই বক্তব্য, ঈদুল আজহার আগের সময়টুকুর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। যাতে ঈদের পর সর্বশক্তি নিয়ে আন্দোলনে নামা যায়। ঈদের আগে অবস্থান কর্মসূচি, লং মার্চ, রোড মার্চসহ জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি কী দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে শিক্ষক, চিকিৎসকসহ পেশাজীবীরা যেন স্ব-স্ব জায়গায় আন্দোলনে নামতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দেন নেতারা। মূলত এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সবাইকে ছাড় দিয়ে হলেও আন্দোলনের বাইরে থাকা দলগুলোকে যুক্ত করা। সবাইকে রাজপথে নামানো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের বৈঠকে যৌথ ঘোষণাপত্র ও আন্দোলনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেছি। কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা বলেন, কর্মসূচি নিয়ে সবার আন্তরিকতা আছে। কিন্তু নানা কারণে কোথায় যেন আমরা বাঁধা পড়ে গেছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বৈঠকে চলমান আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলছে, সেটা আপনারা দেখতে পারছেন। এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।

এএইচআর/এসকেডি