আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লন্ডন সফরের হিড়িক পড়েছে বিএনপি নেতাদের। সেখানে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও করছেন তারা। হঠাৎ এতো নেতার লন্ডন সফর নিয়ে দলের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। 

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দাবি, লন্ডন সফরে যাওয়া নেতারা দলীয় কোনো বার্তা বহন করছেন না। তারা নিজ-নিজ স্বার্থে লন্ডন যাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্য দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখা এবং নিজ সংসদীয় আসনে আগামী দিনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দেওয়া।   

বিএনপির সূত্র বলছে, গত রোজার ঈদের আগে-পরে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক  রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলের ১৫ জনের অধিক নেতা। তার মধ্যে রয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদিন ফারুক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনসহ আরও অনেকে। 

এছাড়া বিএনপির সাবেক জোটসঙ্গী বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  

বিএনপি নেতারা বলছেন, যারা লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সবাই নিজ উদ্যোগে গেছেন। তাদের কাউকে তিনি ডেকে নেননি। সবাই মোটামুটি দুইটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তার একটি হলো, দলে নিজের পদ-পদবী ও অবস্থান পাকাপোক্ত করা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে- আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ সংসদীয় আসনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য একটি বার্তা দেওয়া যে, ‘আমার অবস্থান ভালো। আগামী নির্বাচনেও আমি দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’

গতকাল রোববার লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরেছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভালো আছেন, সুস্থ আছেন, তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমরা যেহেতু আন্দোলনে আছি, সেটাকে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আরও বেগবান করার জন্য সকল প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এ্যানী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা যেহেতু আন্দোলন-সংগ্রামে আছি, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করাই আমাদের লক্ষ্য। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এটা নিয়ে তিনি কোনো বার্তাও দেননি তিনি। 

লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গিয়েছিলাম যুক্তরাজ্য বিএনপির স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রামের বিশেষ অতিথি হিসেবে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এটাই আমার উদ্দেশ্য। অন্যরা কেন যাচ্ছেন সেটা তো আমি বলতে পারব না।

তিনি আরও বলেন, সেখানে বিএনপির মিডিয়া সেলের বিষয়বস্তুসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, যারাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন, সবাই তার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে একটি বার্তা দেওয়া চেষ্টা করছেন। তা হলো, ‘দলে আমার অবস্থান ভালো। আগামী নির্বাচনে আমিই প্রার্থী হতে যাচ্ছি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো।’  

এ নেতা আরও বলেন, দলের জন্য কোনো বার্তা দেওয়ার দরকার হলে তিনি মহাসচিবকে ডেকে নিতে পারতেন। আর সাংগঠনিক কোনো বার্তা দেওয়া হলে দপ্তরের কাউকে ডেকে নিতেন। সেটা করেননি তিনি। ফলে, এতে বোঝা যায় এটা নেতাদের ব্যক্তিগত সফর।  

দলীয় নেতাদের লন্ডন সফর নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, নেতা যেহেতু লন্ডন থাকেন। তাই সামনাসামনি কথা বলতে হলে লন্ডন তো যেতেই হবে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা লন্ডন যাচ্ছেন। আবার অনেকে কাজে লন্ডন যান, তখন নেতার সঙ্গে দেখা করে আসেন। আবার অনেকে সাংগঠনিক কাজেও লন্ডন যেতে পারেন। নানা কারণে নেতারা লন্ডন যেতেই পারেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কে, কখন, কোন নেতৃবৃন্দ গিয়েছেন কিংবা যাচ্ছেন আমি জানি না এবং জানার কথাও না। তবে, মাঝে মধ্যে অনলাইনে যখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখি তা আমাদের মধ্যে প্রেরণার যোগায়।  

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে মা খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করছেন তারেক রহমান। সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে পর দলের সংসদ সদস্যরা শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তে শপথ নেন।

এএইচআর/এসকেডি