রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এসব বন্ধের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) স্মারকলিপি দিয়েছে রাজনৈতিক দলটি।

বুধবার (২৪ মে) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলটির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি দিয়েছে এবি পার্টি।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০ খ(১)(ক)(ই) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৬ উপবিধি (ঞ)(ই) অনুসারে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আবেদনকারী রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য কেন্দ্রীয় দপ্তর, জেলা ও মহানগর, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন থানাসমূহে দলের অস্তিত্ব এবং তৎপরতা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলছে। গত ২ মে ঢাকা জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা কর্তৃক আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিদর্শন ও যাচাই বাছাইকালে জেলা, উপজেলা ও থানা নির্বাচনী কর্মকর্তারা যে সকল বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় কাগজ, দলিলপত্র পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছেন আমাদের স্ব স্ব অঞ্চল ও শাখার নেতারা তা উপস্থাপন করেছেন। কোন কাগজপত্রের ব্যাখ্যা প্রয়োজন হলে বা ছোটখাট ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তারা সেজন্য সময় বেঁধে দিয়ে তা সংশোধিত আকারে দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় কিছু জেলা, উপজেলা ও থানা কর্মকর্তা দলের অস্তিত্ব ও তৎপরতা যাচাই-বাছাইকালে নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইনের বাইরে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক, অপেশাদার, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, হয়রানি ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ করেছেন। যা খুবই অনভিপ্রেত।’

‘আপনি অবগত আছেন যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি ও পরিচালনা করা কত কঠিন ও জটিল একটি কাজ। সরকারি দলসহ বড় বড় দলগুলো কেউই চায় না নতুন রাজনৈতিক দলের বিকাশ ঘটুক। এর বাইরে সরকারি নানা সংস্থার নজরদারির নামে হয়রানি ও ধমক, হুমকিতো রয়েছেই। সরকার দলীয় লোকদের বাধায় বেশ কিছু জায়গায় আমাদের দলীয় অফিসের ব্যানার, সাইনবোর্ড খুলে ফেলতে হয়, বাড়িওয়ালাকে হুমকি দিয়ে চুক্তি বাতিল করানো এবং দলীয় অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। থানায় অভিযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিডি নিতে অস্বীকার করে এবং স্থানীয়ভাবে মিটমাট করার জন্য পরামর্শ দেন। এরকম বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে জেলা-উপজেলায় ১৪০টির মতো দলীয় কার্যালয় স্থাপন, হাজার হাজার কর্মীদের নিয়ে দলীয় তৎপরতা চালানো এবং দলকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এরপরেও আমরা নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন মেনে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সবকিছু চালিয়ে আসছি।’

দলটি স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করেছে, ‘সাম্প্রতিক যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলার সময় কিছু কিছু নির্বাচন কর্মকর্তাকে মনে হয়েছে তারা বিশেষ দুটি দলের প্রতি আনুগত্যশীল। ফলে নানা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে তারা আমাদের দলীয় নেতা ও কর্মী এবং আমাদের অফিস ভবনের মালিকদেরকে হয়রানি করার চেষ্টা করেছেন। কোন কোন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টার নোটিশে কমিটির নেতাকর্মী বা ভোটার সদস্যদেরকে দলীয় কার্যালয়ে হাজির করার নির্দেশনা দেন। যেহেতু বিভিন্ন অঞ্চলে ফসল কাঁটার মৌসুম চলছে, বর্ষা আর পরিবহন সংকটে সেটা বাস্তবসম্মত না। অনেকে চাকুরি কিংবা পারিবারিক ব্যস্ততা বা অসুস্থতার কারণে নিজের এলাকার বাহিরে থাকছেন। এ সকল বাস্তব সমস্যা আমলে নিতে তারা নারাজ।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘তাদের অপেশাদার ও এখতিয়ার বহির্ভূত হয়রানিমূলক তৎপরতার কারণে আমাদের নেতাকর্মী ও অফিস ভবনের মালিকদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। যা কোনোভাবেই সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অনুকূল নয়। আমরা কতিপয় নির্বাচন কর্মকর্তার এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। আমরা মনে করি এটা তাদের ইচ্ছাকৃত এবং হীন উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতা। যা এবি পার্টির নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। অবিলম্বে জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে কতিপয় কর্মকর্তার এহেন হয়রানি এবং হীন উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতা বন্ধের জন্য আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এসআর/এমজে