তিন দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুমতি না মেলায় স্থগিত করেছে নিবন্ধন হারানো দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী ১০ জুন (শনিবার) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে দুপুর ২টায় নতুন করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

সোমবার (৫ জুন) সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

রাজধানীতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের অনুমতি না দিয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।

তিনি স্থগিত কর্মসূচির নতুন করে বাস্তবায়নের তারিখ ঘোষণা করে বলেন, আজকের কর্মসূচি স্থগিত। আগামী ১০ জুন (শনিবার) বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে দুপুর ২টায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। শিগগির এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হবে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা পাব। পুলিশ প্রশাসন যেন গণতন্ত্র বিরোধী ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে নিজেদের প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড় না করায়। আমরা সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য পোষণ করে এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। 

বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও নিশি রাতের ভোটের পর, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে জনগণ বিশ্বাস করে না। এখন পর্যন্ত সরকার জনগণের দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতি, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দায়ের ও নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে আটক রেখে আবারো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। 

যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন কারাগারে আটক রয়েছেন- নায়েবে আমীর মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য শাহজাহান চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও আলেম-উলামা। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মুক্তি না দিয়ে জামায়াত নেতাদেরকে জেলখানায় আটকে রাখা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থী। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আটক নেতাদের মুক্তির পরিবর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা ও বন্দি থাকাবস্থায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিলের কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অথচ গত ১৫ বছর যাবত রাজপথে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি পুলিশের নিকট শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। 

গত ২৮ মে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ডিএমপির কাছে অনলাইনে ৫ জুন সমাবেশের জন্য আবেদন করে। ২৯ মে সুপ্রিম কোর্টের ৪ জন আইনজীবীর একটি প্রতিনিধি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতাদের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৫ জুন সমাবেশের আবেদন নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নিকট গেলে কমিশনার কার্যালয়ের গেট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

এর আগে, ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দফা সমাবেশের জন্য সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করা হয়। প্রশাসন কোনোটার ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করেনি। বরং প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ করলে পুলিশ সেখানে চড়াও হয়  এবং অসংখ্য নেতাকর্মীকে হামলা করে আহত ও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

জামায়াতকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল দাবি করে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতকে সভা সমাবেশ করতে না দিয়ে কোটি কোটি মানুষের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের বিশ্বাস, সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দেবে। কিন্তু সরকার এবারও অনুমতি না দিয়ে সংবিধান ও সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, রাজধানীতে কী শুধু ছুটির দিনে সভা-সমাবেশ হয়? অন্যান্য রাজনৈতিক দল কর্মদিবসে সভা-সমাবেশ করলে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে দ্বিমুখী আচরণ কেন? আমরা পুলিশ প্রশাসনের দ্বিমুখী আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া পুলিশের কাজ নয়। গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়ে আপনারা নিজেদের গণতন্ত্র বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করবেন না। 

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে সুনির্দিষ্ট ৩টি দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করতে চায় জামায়াতে। গোয়েন্দা প্রধান এখানে কীসের অসৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন? রাষ্ট্রের সেবক হয়ে অসত্য কাল্পনিক কথা বলে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি।

জেইউ/ওএফ