আগামীকাল বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশ শুরুর আগেই বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল পর্যন্ত মিছিলে মিছিলে মুখর করছেন দলটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জলকামান ও প্রিজনভ্যান দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পল্টনের রাস্তার একপাশ দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছেন বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের সেচ্ছাসেবীরা। এছাড়া শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনে ঘেরা হচ্ছে পুরো নয়া পল্টন। যদিও মহাসমাবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে পুলিশকে।

অন্যদিকে এ মুহূর্তে স্লোগান না দিতে এবং যার যার গন্তব্যে গিয়ে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান।

যে ২৩ শর্তে মহাসমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি

২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই)  ডিএমপির শর্তে বলা হয়, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ শর্ত যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে ২৮ জুলাই দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে (পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং থেকে নাইটিংঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উদ্যোগে ঢাকার মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। 

শর্তগুলো হচ্ছে

১. এ অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। 

২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

৩. অনুমোদিত স্থানেই (পুলিশ হাসপাতাল থেকে নাইটিংঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান) মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

৪. কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না। 

৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।

৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী-নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৯. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।

১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।

১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে- এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য দেওয়া বা প্রচার করা যাবে না।

১৩. মহাসমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

১৪. মহাসমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।

১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) মহাসমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়-এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।

১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।

২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

২২. উল্লিখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।

২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এ অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।

এমএম/এমজে