বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউয়ে সতর্ক হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সংশ্লিষ্ট ও দলীয় নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, জনসচেতনার কারণে দেশে করোনার প্রকোপ কমেছিল। কিন্তু কমার পরে মানুষের মাঝে এক ধরনের অসচেতনতা তৈরি হয়েছিল। মানুষ স্বাভাবিক নিয়মেই সবকিছু শুরু করেছিল। স্বাস্থ্যসুরক্ষায় অবেহলায় করোনা প্রকোপ আবার বেড়েছে। স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মানলে করোনা প্রকোপ আবারও কমবে। এজন্য মানুষের মধ্যে সচেতন সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে কাজ করছেন তারা।

গত ২৮ মার্চ এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সব অনুষ্ঠান সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। পাশাপাশি গত বছর মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, তেমনি সামনেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করব। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও মানুষের পাশে থাকতে হবে। যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণ, মাস্কসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, জনসচেতনার জন্য আমরা রাজনৈতিকভাবে চেষ্টা করছি। শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জনসচেতনতামূলক বার্তা দেওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার নেতারা আজ সেই কর্মকাণ্ড করেছে। এখন মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পরলে অনেক বেশি সুরক্ষা হয়।

অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, সেখানে ভয় না পেয়ে সেটা কীভাবে মোকাবিলা করব সেটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা মানুষকে ফেলে ঘরে উঠে যাব, সেটা তো হতে পারে না। মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে, আবার নিয়ম মেনে চলতে হবে। আমি যখন নিয়ম মানব তখন কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও নিয়ম মানবে। অন্যদিকে প্রশাসনও চেষ্টা করছে, তারা এখন অনেক বেশি সক্রিয়।

মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আমরা জনসচেতনার জন্য মানুষকে বুঝাচ্ছি। কিন্তু তারা বুঝতে চাইছে না। আমরা তো জোর করে বা চাপ সৃষ্টি করে তাদের বুঝাতে পারি না। রেডিও, টেলিভিশনে নিয়মিত বলা হচ্ছে। কিন্তু মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা হলো, হেফাজতের সমাবেশ হলো। কেউ তো কিছুই মানছে না।

দলটির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, মফস্বল ও গ্রামের মানুষের অসচেতনতাটা অনেক বেশি। চায়ের দোকানে আড্ডা, বিয়ে, সমাজিক অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সচেতনতাটা ছিল না। এখানে স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা মাস্কও পরে না মানুষ। এখন মানুষকে সচেতন করা, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উৎসাহী করতে কাজ করছেন তারা। এজন্য তারা মাইকিংসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলার সভাপতি বলেন, এখন সব থেকে বড় বিষয় হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ করা। এখন তো আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ডই বন্ধ। বাজার বন্ধ থাকলে অনেকটাই কাভার হয়ে যায়, এটা থেকেও করোনা অনেক ছড়ায়। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ওয়াজ। ওয়াজে আগতদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা মানার বিষয়ে এক ধরনের অনিহা কাজ করে। এখনও বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তৃণমূলের নেতারা লকডাউন বা সাধারণ ছুটির বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু লকডাউনে মানুষের মাঝে কর্মবিমুখতা তৈরি হয়, চাকরির অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। এতে জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় দফায় লকডাউন হওয়ায় কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে। সমস্যায় পড়বেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এই বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। তাদের আমরা বলেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে সচেতনতার জন্য কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আমাদের কাজ করছি। এখন মানুষ যদি সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানে তাহলে করোনার প্রকোপ কমবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। তাদের আমরা বলেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে সচেতনতার জন্য কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আমাদের কাজ করছি। এখন মানুষ যদি সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানে তাহলে করোনার প্রকোপ কমবে।

এস এম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

লকডাউন বা ছুটির বিষয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, জীবন-জীবিকার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। জীবিকা চালাতে হলে কাজ করা দরকার। কাউকে তো অনুদানের ওপর বাঁচিয়ে রাখা যায় না। সব মানুষকে কী আপনি অনুদানের ওপর বাঁচিয়ে রাখবেন? কাজও তো চালাতে হবে। সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

এইউএ/এসএসএইচ/এমএইচএস