সরকার পতনের আন্দোলন জোরদারের আহ্বান জামায়াতের
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোমবার (২০ নভেম্বর) দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার জরুরি অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক থেকে মজলিসে শূরা দলমত নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন জোরদারের আহ্বান জানান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে গত ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলায় যে রায় প্রদান করেছেন তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দলটি।
সোমবার দলের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মুজিবুল আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি শুনানির সুযোগ না দিয়ে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল। বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে যে কয়টি অংশগ্রহণমূলক ছিল তাতে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে এবং জামায়াতের বিজয়ী প্রার্থীগণ সংসদের ভেতরে-বাইরে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াতের ২ জন মন্ত্রী সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন, তা দেশের ইতিহাসে বিরল।
কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার বিধানকে আইনে পরিণত করার জন্য ১৯৮৩ সাল থেকে জামায়াত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে এবং ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ইস্যুতে আন্দোলন করে সংবিধানের ১৩-তম সংশোধনী পাসের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে আইনে পরিণত করতে সক্ষম হয়। ফলে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার উদ্দেশ্যেই ২০১১ সালে সংবিধানের ১৩ তম সংশোধনী বাতিল করে ১৫-তম সংশোধনী পাস করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন বাতিল করে দেশকে এক মহাসংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে কারণে জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো আবার কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ দাবি আদায় করার জন্য গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।
মজলিসে শূরার অভিমত, জামায়াতকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার সরকারি কৌশল হিসেবেই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি শুনানির সুযোগ না দিয়ে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। জামায়াত নির্বাচনে সব সময়ই অংশগ্রহণ করে থাকে। বিগত বছরগুলোতে জামায়াত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের বিপুল সমর্থন লাভ করে অনেকগুলো উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছে। জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই অন্যায়, অসত্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে।
নিবন্ধন রায় সম্পর্কে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে মজলিসে শূরার পর্যবেক্ষণ- জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীগণ জামায়াতের নিবন্ধন মামলার শুনানির জন্য পর্যাপ্ত সময়ের জন্য আদালতে আবেদন করেছিল। কিন্তু তা মঞ্জুর না করে আদালত ১৯ নভেম্বর হরতালের দিন মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীগণ সাধারণত হরতালের দিন আদালতে যান না। যে কারণে জামায়াতের সিনিয়র আইনজীবীগণ মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলায় একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অভিমত ব্যক্ত করছে যে, আপিল বিভাগে বিচারাধীন নিবন্ধন মামলাটি শুনানির সুযোগ না দিয়ে খারিজ করে দেয়ায় তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয়।
এ রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট উল্লেখ করে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সরকারি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এ রায়ের মাধ্যমে জামায়াতকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে জামায়াতকে বঞ্চিত ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মজলিসে শূরার পক্ষ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন আরো জোরদার করার জন্য দলমত নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
জেইউ/এমএ