দেয়াল, পিলার এমনকি থানার গেটেও লাগানো হয়েছে ঢাকা-৫ আসনে (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (স্বতন্ত্র) মনোনীত প্রার্থী মো. সারোয়ার খানের কাঁঠাল মার্কার পোস্টার। বাদ যায়নি ট্রাকও। একই আসনের আরেক প্রার্থীর ব্যানার লাগানো হয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের পিলারে। যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।
 
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দেয়ালে কাঁঠাল মার্কার প্রার্থীর প্রচারণায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। কোথাও একসঙ্গে একাধিক পোস্টার, কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে লাগানো হয়েছে এসব পোস্টার। 

অন্যদিকে, যাত্রাবাড়ী থানার গেটের দুইপাশেও লাগানো হয়েছে কাঁঠাল মার্কার প্রার্থীর পোস্টার। শুধু তাই নয়, থানার সীমানা প্রাচীরেও পোস্টার লাগানো বাদ যায়নি। 

নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ভবন, দেয়াল, গাছ, ল্যাম্পপোস্ট বা সরকারি স্থাপনা এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহনে কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. সারোয়ার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পোস্টার রশি দিয়ে লাগানো হচ্ছে, নিচ দিয়েও কিছু লাগছে, এই। রশি দিয়েই লাগাচ্ছি, সমস্যা নেই। হয়তো কিছু লোকজন নিয়ে কয়েকটা (পোস্টার) লাগিয়েছে, এটা হতে পারে। 

দেয়াল ছাড়াও থানার গেটেও আপনার পোস্টার লাগানো হয়েছে। এটাতো আচরণবিধির লঙ্ঘন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করার চেষ্টা করি না। কিন্তু বিলবোর্ড দেখা যায় অনেক বড় বড়। মাপ আছে ৩ ফিট আর ৯ ফিট, কিন্তু বিলবোর্ড একেকটা দেখি ৪০ ফিট, ৫০ ফিট। এটাতো আমরা বলতে পারছি না। এটা আপনারা বলবেন। ঢাকা শহরের প্রত্যেকটা জায়গায় একেকটা বিলবোর্ড দেখছি ৫০ ফিট। এ বিষয়টিও আপনারা তুলে ধরবেন।’

তিনি আরও বলেন ‘কিছু ছেলে হয়তো পোস্টার নিয়েছে। রশিতে লাগানোর কথা থাকলেও তারা অন্য জায়গায় লাগিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি আমি দেখব, যাতে আর না লাগায়।’

অন্যদিকে, তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু হানিফ হৃদয়ের সোনালী আঁশ মার্কার ব্যানারও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের পিলারে লাগানো হয়েছে। এটিও নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু হানিফ হৃদয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেসব লোক এগুলো লাগিয়েছে, তারা না জেনেই লাগিয়েছে। লাগানোর সময় তাদের ভুল হয়েছে।’
 
‘এটা ওদেরকে বলা হয়েছে, এভাবে লাগানো নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন, আমি নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই প্রচারণা চালাতে চাই’, বলেন তিনি। 

যা আছে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আচরণবিধিতে

পোস্টার, লিফলেট বা পেইন্টিং; ভবনের দেয়াল, গাছ, ল্যাম্পপোস্ট বা সরকারি স্থাপনা ও বাস-ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, রিকশাসহ কোনো ধরনের যানবাহনে লাগানো যাবে না। অন্য প্রার্থীর পোস্টারের ওপরেও পোস্টার লাগানো যাবে না। দেয়াল বা যানবাহনে যেকোনো ধরনের ছবি আঁকাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শোডাউন কিংবা বাস-ট্রাক ও নৌকার মতো যানবাহন ব্যবহার করে মিছিল করতে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রচারণার বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। গেট বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না এবং চলাচলের পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ৪০০ বর্গফুটের বেশি স্থান নিয়ে কোনো প্যান্ডেল বা মঞ্চ করা যাবে না। বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না। সড়ক, জনগণের চলাচল কিংবা সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে না।

প্রার্থীর ছবি, প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্যসহ শার্ট, জ্যাকেট বা ফতুয়া ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদ, মন্দির গির্জা বা অন্য ধর্মীয় কোনো উপাসনালয়ে কোনো ধরনের প্রচারণা চালানো যাবে না। ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বা কোনো ধরনের তিক্ত (উসকানিমূলক বা মানহানিকর) কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ বা অর্থ ব্যয় করতে পারবে না।

আইনপ্রণেতাদের জন্য নিয়ম

মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা প্রচারণা সংক্রান্ত কাজ করার সময় সরকারি যানবাহন ব্যবহার বা অন্যান্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অনুদানও নিতে পারবেন না। ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য সরকার কোনো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন বা উদ্বোধন করতে পারবে না। এ ছাড়া প্রার্থী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সদস্য হয়ে থাকলে নির্বাচনের আগে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সভায় অংশ নিতে পারবেন না। সার্কিট হাউস, সরকারি বাংলো বা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে দলীয় সভা ও প্রচারণার অনুমতি দেওয়া হবে না।

২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনের আচরণবিধি অনুসারে, সব দলীয় প্রার্থী বা ব্যক্তির একই অধিকার রয়েছে। কেউ অন্য প্রার্থীকে বাধা দিতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ও অনুমোদনের পর সব অনুষ্ঠান করতে হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার শাস্তি অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড, অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড।

এসএইচআর/জেডএস