• কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহার দিচ্ছে আওয়ামী লীগ
• চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী জনবল গড়ে তোলায় গুরুত্বারোপ
• ক্যাশলেস সোসাইটি, উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে থাকছে অধিক গুরুত্ব
• গবেষণা ও উদ্ভাবননির্ভর বিষয়গুলো দেখা যাবে ইশতেহারে
• ‘সাথে আছি থাকব কাল, শেখ হাসিনা ধরবে হাল’

বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় ইশতেহার দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহার প্রণয়নে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ জোর, স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে ক্যাশলেস সোসাইটি, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, গবেষণা ও উদ্ভাবননির্ভর বিষয়গুলো ইশতেহারে দেখা যাবে।

দলীয় সূত্র মতে, এবারের ইশতেহারের থিম হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এবং স্লোগান হবে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে কর্মসংস্থান’। তবে, ইশতেহারের সর্বশেষ পাতায় একটি লেখা থাকবে, সেটি হলো- ‘সাথে আছি থাকব কাল, শেখ হাসিনা ধরবে হাল’।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করতে পারেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, গত ১৫ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্পায়নের একটি ভিত্তি স্থাপন হয়েছে। এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দেশটাকে সুউচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার আরও কমানোর কথা বলা হয়েছে। সে লক্ষ্য কাজ করবে দলটি।

ইশতেহার উপকমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর যে ১৫ বছরের উন্নয়ন, বিশেষ করে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, ইনভেস্টমেন্ট— এগুলোকে কীভাবে জনকল্যাণে কনভার্ট করা যায়, এজন্য বাস্তবিক পদক্ষেপ আমাদের এবারের ইশতেহারে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যতগুলা লংটার্ম প্রোগ্রাম আছে, প্ল্যান আছে, দেশের সর্বস্তরের মানুষ যেন সমানভাবে সেটা পায়— এমন বক্তব্য সেখানে থাকবে। ইশতেহারে কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের নামে প্রতিটা সেক্টরে যেন ইফিসিয়েন্সি বাড়ে, সে বিষয়টি থাকবে। দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স থাকবে। আমাদের উদ্যোগের কারণে দেশে যে ব্যাপক দুর্নীতি কমেছে, সেটা কিন্তু কেউ বলছে না। যেমন- বাংলাদেশে টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়েছে, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতির প্রধান দুটি ক্ষেত্র ডিজিটালাইজেশনের কারণে বন্ধ হয়েছে।

ইশতেহার উপকমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান ও এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ— এ দুটি দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তিকে আমাদের গভার্নেন্স, আমাদের ডেভেলপমেন্ট, আমাদের ওয়েলফেয়ারে ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা হাইটেকের দিকে যাচ্ছি, আমাদের জিডিপিতে অ্যাগ্রিকালচার, সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কন্ট্রিবিউশন রয়েছে। এগুলো ইমার্জিং ইকোনমিকের ক্ষেত্রে কোথায় কতটুকু প্রয়োজন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে দরকার— সেভাবেই আমরা ইশতেহার প্রণয়ন করেছি।’

ইশতেহার উপকমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ইশতেহারে থাকবে বৈষম্য দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। কীভাবে কর্মসংস্থান হবে, দারিদ্র্য আরও কমবে, সম্পদশালী ও সম্পদহীনদের মধ্যে যে গ্যাপ সেটা আমরা কী কৌশলে নামাব— এগুলো থাকবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা— এগুলোও তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এবারের ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষিত ইশতেহারের নাম দেওয়া হয় ‘দিনবদলের সনদ’। যা ওই সময় তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতা আসে দলটি।

২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ‘নিরাপদ ব-দ্বীপ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় ইশতেহারে। সেখানে প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

১৯৯০ সালের পর প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা নির্বাচনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

এমএসআই