* আ.লীগের শতাধিক নেত্রী চায় ৩৭ আসন    
* জোর লবিংয়ে ব্যস্ত সাবেক নেত্রীরা
* হেভিওয়েট নেতাদের সালামের মধ্য দিয়ে জানান দিচ্ছেন অবস্থান
* হাইকমান্ডের সঙ্গে দেখা করতে মরিয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
* ত্যাগীদের প্রত্যাশায় ভাগ বসাতে চায় সুদিনের কর্মীরা  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের অফিস থেকে শুরু করে বাসায়ও হানা দিচ্ছেন তারা। ফুলের তোড়া নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। এককথায় সকাল-সন্ধ্যা সিনিয়র নেতাদের কাছে সুপারিশে ব্যস্ত সময় পার করছেন দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিডিউল ঘোষণার পর দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

দলীয় সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে বসতে তৎপর হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা। তফসিল ঘোষণা না হলেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে নানা কায়দায় সক্রিয় রয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত এমপিরা শপথ গ্রহণের পর থেকে সংরক্ষিত আসনটিতে মনোনয়ন পেতে সিনিয়র নেতাদের কাছে লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেত্রীরা। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া কয়েকজনও এ দৌড়ে শামিল হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের দু:সময়ে যারা কাজ করেছে, দুর্দিনের কর্মী এককথায় যারা নিপীড়িত-নির্যাতিত, যারা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; সংরক্ষিত আসনের জন্য তাদের মনোনীত করা হবে। এছাড়া যারা নারী অধিকার ও নারী জাগরণে অবদান রাখতে পারে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। আবার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, সেলিব্রেটি, পেশাজীবী— সবকিছুর সমন্বয়েই সংরক্ষিত আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনে ১১ আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির (জাপা) দুটি সংরক্ষিত আসনে দলের দুই কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলামের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। এর বাইরে ৪৮ জনের মনোনয়ন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। এ অবস্থায়, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পাশাপাশি অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। কেউ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসে নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের আর্জি জানাচ্ছেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের মধ্যে ৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এক হাজার ৫১০ জন আবেদন করেছিলেন। এবারও পরিস্থিতি একই রকম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীরাও সংরক্ষিত আসনে বসতে চাচ্ছেন।

দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত এমপিদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ১২ জনকে স্বপদে বহাল রাখতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অধিকাংশ সংরক্ষিত আসনেই নতুনরা স্থান পেতে পারে। তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দেওয়া আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব আরা গিনি, দলের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার চাপা, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, পারভীন জামান কল্পনা ও তারানা হালিম।

এ ছাড়া, আরো আলোচনা রয়েছেন— যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী, নাটোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আসমা জেরিন ঝুমু, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালী, ফরিদা খানম সাকী ও আসমা আক্তার।

তারকাদের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার, তারিন জাহান, অপু বিশ্বাসসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশ কয়েকজন তারকা আলোচনায় রয়েছেন।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

আইন অনুযায়ী— স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট গঠন করে নারী এমপি নির্বাচিত করতে পারবেন। ফলে বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোটবদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এবার প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ৬০ জন মিলে ১০ সংরক্ষিত আসনের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবেন। 

দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিশ্বাস করি— আমার কাজের রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে আমি মনোনয়ন পাব। যদি তা না পৌঁছায়, তাহলে তো কিছু করার নেই। এখনো কাজ করে যাচ্ছি, তবে সংরক্ষিত আসনে সুযোগ পেলে আরও বেশি কাজ করতে পারব।

এমএসআই/এমজে