আদালত চত্বরে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি নওমুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ইসলামের ছায়াতলে সদ্য প্রবেশকারী নওমুসলিম ভাই ইব্রাহীম ওমর এবং নওমুসলিমা বোন জান্নাতুল ইসলামকে হিন্দুত্ববাদী লোকজন কোর্ট প্রাঙ্গণে টেনেহিঁচড়ে লাঞ্ছিত করে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তারা বলেন, কয়েক বছর আগে আদালতের মাধ্যমে নওমুসলিম ভাই ইব্রাহিম ওমর এবং নওমুসলিমা বোন জান্নাতুল ইসলাম (স্নেহা) মুসলিম হয়েছেন। তারা দেশের প্রচলিত আইন মেনে ও শরিয়ত সম্মতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের সাংসারিক জীবন প্রায় দুই বছরের বেশি। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে নওমুসলিমা বোনের হিন্দু মায়ের করা একটি অপহরণ মামলায় নওমুসলিম ভাইকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। এছাড়া নওমুসলিমা বোনকে উদ্ধার দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে সোপর্দ করে। 

আদালত নওমুসলিমা বোনের জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে আদালতের কার্যক্রম শেষে যখন নওমুসলিমা বোনকে কোর্ট কাস্টডি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন হিন্দুত্ববাদীরা তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নওমুসলিমা বোন কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যেতে চাচ্ছিলেন না। তখন আদালত প্রাঙ্গণে থাকা মুসলিম ভাইদের প্রতিবাদের মুখে তারা পিছু হটলেও নওমুসলিমা বোনকে নিরাপদে বের করার কোনো উপায় তাদের ছিল না। এ অবস্থায় নওমুসলিমদের পক্ষের অ্যাডভোকেট নওমুসলিমা বোনটিকে তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য আবারও কোর্ট কাস্টডিতে ঢুকিয়ে ফেলেন।

হেফাজত নেতারা বলেন, সে সময় হিন্দুত্ববাদীরা ‘জয় শ্রীরাম’সহ বিভিন্ন উগ্র স্লোগান দিতে থাকলে মুসলিম ভাইয়েরাও ‘আল্লাহু আকবর ধ্বনি’ উচ্চারণের মাধ্যমে তাদের জবাব দেয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ প্রটোকল দিয়ে নওমুসলিমা বোন যেখানে যেতে চায়, সেখানে পৌঁছিয়ে দিতে বললেও হিন্দুত্ববাদীদের চাপের মুখে কোর্ট কর্তৃপক্ষ বোনটিকে সেভ কাস্টডিতে রাখতে বাধ্য হন। 

হেফজাত আমির ও মহাসচিব বলেন, ধর্মান্তরিত হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা। বাংলাদেশের সংবিধান কোনো নাগরিককে ধর্মান্তরিত হতে বাধা দেয় না। যে দুজন মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক ও পরিণত জ্ঞানের অধিকারী। তারা স্বজ্ঞানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাদের জোরপূর্বক অন্য কোনো ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়া সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার এভাবে হরণ করার অধিকার কারও নেই। 

হেফাজত নেতারা বলেন, আমরা মনে করি, সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে আদালতকে প্রভাবিত করার জন্য আদালত প্রাঙ্গণে যে উচ্ছৃঙ্খল স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা সুস্পষ্ট আদালত অবমাননার শামিল। নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে মুসলমানদের কটাক্ষ করে যে উগ্রবাদী ভঙ্গিতে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, সেটি কোনো অবস্থাতেই বরদাশত করে নেওয়ার মতো নয়। উগ্রবাদী কোনো গোষ্ঠী যদি সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার মাধ্যমে আদালতকে প্রভাবিত করে নওমুসলিম এ দম্পতিকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো অপচেষ্টা চালায়, তাহলে অবশ্যই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কঠোর হস্তে তার মোকাবিলা করবে।

অনতিবিলম্বে নওমুসলিম এ দম্পতিকে সব ধরনের আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত করে তাদের স্বাধীন, স্বাভাবিক এবং নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

এমআর/কেএ