কৃষক লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও এক বছর আগে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই এতো দিন ধরে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। তবে চলতি বছরের নভেম্বরে ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নভেম্বরের যে তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন সেই তারিখেই সম্মেলন করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র।

এ প্রসঙ্গে কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্য সকল সাংগঠনিক ইউনিটের কাউন্সিল সম্পন্ন হবে। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি যে তারিখ দেবেন সেই তারিখেই সম্মেলন করতে প্রস্তুত আমরা।

২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের ১০ম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন কৃষক লীগের সভাপতি হিসেবে সমীর চন্দ্র এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উম্মে কুলসুমকে মনোনীত করা হয়। এর আগের কমিটিতে তারা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সম্মেলনের প্রায় ১১ মাস পর ২০২০ সালের অক্টোবরে ১১১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, কৃষক লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি ইউনিটের সম্মেলন ও কমিটি দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২ হাজার ৩৩৯ ইউনিয়ন ও প্রতিটি ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে সম্মেলনে করেছে সংগঠনটি। এছাড়া ২৯১টি উপজেলায় সম্মেলন করা হয়েছে। তবে আগামী এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আরও ২৭টি জেলায় সম্মেলনের জন্য তারিখ ঘোষণা হয়েছে। সেই জেলাগুলোয় বর্তমানে সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা চলছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যারা গত কমিটি থেকে দায়িত্ব নিয়েছি তারা পুরো দেশে কৃষক লীগকে অত্যন্ত সুসংগঠিত করেছিলাম। সেই সংগঠনের শক্তির মাত্রা বেশি ছিল জেলা পর্যায়ে। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমাকে সভাপতি ও উম্মে কুলছুম স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করার পর আমরা দুইজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, কৃষকের অভয়ারণ্য হচ্ছে মাঠ মানে গ্রামে। সেখানে যতক্ষণ পর্যন্ত কৃষক সংগঠন শক্তিশালী করতে না পারব, কৃষকদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কৃষক লীগ তৈরি হবে না। তাই প্রতিটি ইউনিয়নে ৯টি করে ওয়ার্ড, সেই সব ওয়ার্ড সম্মেলন করে ইউনিয়ন সম্মেলন সম্পন্ন করেছি। ইউনিয়ন সম্মেলন শেষ করার পর আমরা উপজেলা সম্মেলন করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায় ২ হাজার ৩৩৯টি ইউনিয়নে সম্মেলন করেছি। যেখানে কৃষকের অভয়ারণ্য সেখানে কৃষক সম্মেলন করেছি। আমরা উপজেলা সম্মেলন শেষ করে এখন জেলা সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১২টা জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জেলার সম্মেলনগুলো আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই শেষ করব। ইতোমধ্যে আরও ২৭ জেলায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাকি জেলাগুলোয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

কৃষক লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি ইউনিটের সম্মেলন ও কমিটি দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২ হাজার ৩৩৯ ইউনিয়ন ও প্রতিটি ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে সম্মেলনে করেছে সংগঠনটি। এছাড়া ২৯১টি উপজেলায় সম্মেলন করা হয়েছে। তবে আগামী এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আরও ২৭টি জেলায় সম্মেলনের জন্য তারিখ ঘোষণা হয়েছে। সেই জেলাগুলোয় বর্তমানে সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা চলছে

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, কৃষক লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নতুন কমিটি হওয়ার পর যেভাবে শুরু হয়েছিল সেই গতি বর্তমানে নেই। ১১১ সদস্য কমিটির মধ্যে অধিকাংশ নেতাই এখন নিষ্ক্রিয়। হাতেগোনা ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতা সক্রিয়। কৃষক লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিত হতে দেখা যায়। আর বাকিরা কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর নিষ্ক্রিয়  হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষক লীগের বর্তমান কমিটি নামে কৃষক লীগের হলেও বিভিন্ন পেশার মানুষদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। কৃষক লীগের কমিটিতে অ্যাডভোকেটদের কাজটা কী? তারা তো কোনো দিন মাঠেও যায় না। সারাদিন তো কোর্টে কেটে যায়। কৃষক লীগের কমিটিতে বিভিন্ন পেশার মানুষের সংমিশ্রণের প্রভাব পড়েছে। ১১১ সদস্য কমিটি হলেও অনেককেই এখন আর দেখা যায় না। আর তৃণমূল পর্যায়ে কৃষক ও কৃষির উপরে জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা কৃষক লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে এর সংখ্যা কম। অধিকাংশ বিভিন্ন পেশার লোকজনের। তাদের অনেকেই কোন মৌসুমে কোন ধান হয় সেই তথ্যটুকুও জানেন না।

সাংগঠনিক কার্যক্রমের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এমএসআই/এসকেডি