এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়াই তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রয়েছে।

তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরাও এখনও তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখছেন। রাতে দলীয় প্রধানকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।  

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। কিন্তু এখনও তিনি শঙ্কামুক্ত নন। কারণ তার ফুসফুসের সংক্রমণ পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। এখনও ফুসফুস থেকে পানি জাতীয় পর্দাথ বের করতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও তা আগের চেয়ে তুলনামূলক একেবারেই অল্প। তাই যে কোনো সময় আবারও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার শঙ্কা থেকেই তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে সোমবার (১০ মে) খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের অবস্থা আগের মতোই আছে। আজও তিনি অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়া শ্বাস নিতে পারছেন। নিয়ম করে চিকিৎসকরা তাকে পর্যায়ক্রমে দেখছেন। আমি নিজেও তাকে দেখে এসেছি।

ডা. জাহিদ বলেন, এর বেশি কিছু আমি বলতে পারছি না। আজ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে (খালেদা জিয়া) দেখতে হাসপাতালে যাবেন। ম্যাডামের বিষয়ে কিছু বলার হলে তিনি আপনাদের জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেছেন, আজও খালেদা জিয়ার ফুসফুস থেকে পানি জাতীয় পদার্থ বের করা হয়েছে। আসলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি থাকলেও তিনি এখনও শঙ্কার মধ্যে রয়ে গেছেন। আর তার বয়সী রোগীদের যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। এজন্য তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। 

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চান অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা   

খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে যত রকম বাধা আছে তা দূর করে সরকারের উচিত তাকে যেতে দেওয়া। এমনটাই মনে করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান, তার শারীরিক অবস্থা ও বয়স বিবেচনা করে তার ইচ্ছামতো স্থানে চিকিৎসার অধিকার দেওয়া উচিত। 

নেতাদের যুক্তি, দেশে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাফ পেতে পারলে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও মাফ পেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিয়েছিলেন। এখন তিনি চাইলে একইভাবে তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিতে পারেন। এখানে আইনের কোনো বাধা থাকতে পারে না।

বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমত খালেদা জিয়ার দুর্নীতির কথা বলে বিচার হলেও তা মূলত রাজনৈতিক বিচার হয়েছে। দেশের মানুষের বড় অংশ তাই মনে করে। তারপর তার জামিন পাওয়ার অধিকার ছিল।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স, তার রাজনৈতিক অবস্থান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার শারীরিক রোগসহ অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যে কোনো দেশে যেতে দেওয়াই সঙ্গত বলে মনে করি। তাছাড়া, দুদিন আগেও তার বিষয়ে সরকার সবকিছু মানবিক ও ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে বলে বলে আসছে। কিন্তু হঠাৎ তারা অবস্থান পরিবর্তন করলো। এটা কেন করা হয়েছে তা একেবারেই বোধগম্য নয়। 

সাইফুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সব বাধা সরকারের দূর করে দেওয়া উচিত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যেখানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ও খুনের আসামিরা মাফ পেয়ে যাচ্ছে, সেখানে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখার কোনো মানে আছে বলে আমি মনে করি না।   

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এবং তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয় নিয়ে গত কয়েকদিনে সরকারের পক্ষ থেকে যা করা হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন। সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে আইনি বাধার কথা আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসার নজির এ দেশে রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরও জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবকে ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল সবার আগে। বেগম জিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটি আমি আশা করেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান যে শারীরিক অবস্থা, ৭৬ বছর বয়সী একজন মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক। আমি আশা করব, সরকার তার অবস্থান থেকে সরে এসে মানবিক দিক বিবেচনায় বেগম জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে এবং তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব বহন করবে।

এএইচআর/ আরএইচ/জেএস