সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কেন আপনারা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নিয়ে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন। সোজা বলে দেন যে আমরা দেব না। সেই ক্ষমতা তো আপনাদের নাই।’

মঙ্গলবার (১১ মে) বেলা ১২টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানও এমন ছিলেন না। তিনিও তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিকিৎসার সুবিধা দিয়েছেন, ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকি তাদের ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করেছেন। কিন্তু আপনাদের (বর্তমান সরকার) যোগ্যতা নেই। থাকলে অনেক আগেই খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতেন।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে অনুমতি না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতির এমন নজির নেই। কিন্তু ১৯৭৯ সালে আমাদের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী আ সম আব্দুর রব জেলে ছিলেন। তখন জিয়াউর রহমান দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে দেশে এসেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাজা মাফ করে দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। এমন আরও অনেক আছে, আমি নাম বলবো না। অত্যন্ত উচ্চপদস্থ প্রভাবশালী সরকারের কর্মকর্তাই বলব, তার দুই সহদোর ভাই আইনের এই ৪০১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাদেরকে মাফ করে দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। কেনো খালেদা জিয়ার বিষয়ে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন। সোজা বলে দেন যে আমরা তাকে (বিদেশে যেতে) অনুমতি দেবো না।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে না দেওয়া অত্যন্ত ন্যক্কারজনক দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনের কথা বলে অমানবিক এবং জনগণকে ভ্রান্ত ধারণা দেওয়া হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা তখনও জানিয়েছি, এখনও জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করিনি, করেছেন পরিবার। তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারা সবাই, এমনকি বিদেশিরাও পর্যন্ত আশা করেছিলেন, তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেটা তারা দেয়নি। 

খালেদা জিয়ার সম্পর্কে সরকারের কিছু মন্ত্রীর ‘বিদ্রূপাত্মক’ মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব মন্ত্রী যারা ওইভাবে ক্ষমতায় না আসলে কোনোদিন এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখতেন না, তারা আজ দেশনেত্রীর সম্পর্কে যে ধরনের উক্তি করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের উক্তি করলে যথাযথ জবাব এ দেশের জনগণ আপনাদের দেবে।

সরকার শুধুমাত্র কিছু পুঁজিবাদী ও লুটপাটকারীদের স্বার্থে পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করছে- দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাঁশখালীতে যে ঘটনা ঘটেছে এটা তো কিছু পুঁজিবাদীর স্বার্থে

মির্জা ফখরুল বলেন, শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন চেয়েছিল, তারা ছুটি বাড়িয়ে চেয়েছিল। গতকাল টঙ্গীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। কেন? আলোচনা করেন, কথা বলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বন্দুক বের করে গুলি করলেন? কেউই নিরাপদ নয় আজ।

‘প্রধানমন্ত্রী বারবার করে বলেছেন, প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে’ উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় প্রণোদনা দিচ্ছেন? আমাদের অর্থনীতিবিদদের হিসাবে ছয় কোটি মানুষ ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করছেন। তাদের ৮০ শতাংশ আজ বেকার। তাদের কোনো আয় নাই। আমরা বলেছিলাম, তাদের কাছে নগদ টাকাটা পৌঁছানো দরকার। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। প্রত্যেকের এনআইডি কার্ড আছে, ব্যবস্থা করে টাকাটা পৌঁছানো যায়। আপনি ১০/১৯ কোটি টাকা দিয়ে বলছেন, দিয়েছি। কেন আপনি ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছেন না তাদের জন্য? কেন? এরাই তো মানুষ, জনসংখ্যার এক-দশমাংশ।’

এএইচআর/এমএইচএস