রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় করা মামলাটি মিথ্যা উল্লেখ করে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এছাড়া এ সাংবাদিককে হেনস্তাকারী আমলা-পুলিশের শাস্তি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের অপসারণ, মুক্তবাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও উপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টটিও বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি করা হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যখন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রী অফিস করেন না, ১৮০০ পদে নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ১০ মাস বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে, ৯ সরকারি হাসপাতালে কেনাকাটায় ৩৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি’ ইত্যাদি তুলে ধরেছিলেন তখন দুর্নীতিবাজ আমলারা তাকে সংবাদ দেওয়ার চক্রান্তমূলক কথা বলে গত ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের পিএসের (ব্যক্তিগত সহকারী) রুমে ডেকে নিয়ে ছয় ঘণ্টা ধরে হেনস্তা করে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতা, বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতায় সরকারি হস্তক্ষেপের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ এবং সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।

জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, রোজিনা ইসলাম দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী আমলার প্রতিহিংসার শিকার। তাকে বাতিল আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকারের ২৬ ধারার সঙ্গে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট সাংঘর্ষিক। ফলে যেদিন থেকে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়েছে, সেদিন থেকেই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব আইন বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্বাধীনতার পরই দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে কালাকানুন তৈরির রাস্তা খুলে দেয় তৎকালীন শেখ মুজিব সরকার। যার পথ বেয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ একের পর এক কালাকানুন জারি হতে থাকে। সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক কুখ্যাত কালো আইন জারি করে নাগরিকের বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। যার বলি হচ্ছেন সাংবাদিক, শিক্ষক, লেখক, কার্টুনিস্টসহ মুক্ত চিন্তার মানুষেরা।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক বাচ্চু ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।

১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। ওই রাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন সকালে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। 

২৩ মে সকালে রোজিনাকে আদালতের পক্ষ থেকে জামিন দেওয়ার পর বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন।

এমএইচএন/এফআর