দীর্ঘ ২০ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। আগামী ১৯ জুন (শনিবার) ভার্চুয়ালি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে আসায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। নতুন কমিটির মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তনের পাশাপাশি সংগঠনের গতি ফিরবে বলে প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কারা আসছেন সংগঠনের নতুন নেতৃত্বে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত কৌতূহল বাড়ছে।

চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আমজাদ খান, জমির সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা চট্টগ্রাম থেকে সংযুক্ত হয়ে সম্মেলন পরিচালনার কথা রয়েছে। এছাড়া ভার্চুয়ালি আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। 

২০০১ সালের জুলাই মাসে অ্যাডভোকেট এইচএম জিয়াউদ্দীনকে আহ্বায়ক ও কেবিএম শাহজাহান ও সালাউদ্দিন আহমদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে গত ২০ বছরেও এখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। এমনকি ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়েও সব কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি তারা। তবে সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেওয়ার ঘোষণায় প্রাণ ফিরছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। একটি পক্ষ প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের হয়ে রাজনীতি করে, অন্যটি সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের হয়ে রাজনীতি করে। দুই পক্ষই চাইছে নতুন কমিটিতে নিজেদের লোকজনকে আনতে।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নাফিউল করিম নাফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই নতুন কমিটি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সবার সঙ্গে সমঝোতা করেই একটি কমিটি দেবেন। যদি সমঝোতায় না আসতে পারেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবেন। 

তিনি আরও বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্মেলনের পরে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সাবেক মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জন আলোচনায় রয়েছেন।

আলোচনায় থাকা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুসারী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু, বেসরকারি কারা পরিদর্শক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজ , কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল এগিয়ে রয়েছেন। আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী কর্মাস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সুজিত দাশ এবং আব্দুর রশিদ লোকমান এগিয়ে রয়েছেন। এর বাইরে আলোচনায় রয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্ববায়ক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিনের অনুজ অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, আজাদ খান অভি, শাহেদ আলী রানা, সালাউদ্দিন ও সাদেক হোসেন পাপ্পুর নাম।

সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ১৯ জুন ভার্চুয়ালি সম্মেলনের আয়োজনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। আমরা সেই অনুযায়ী সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছি। আমরা চাই সম্মেলনের মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্ব আসুক। 

তিনি আরও বলেন, সৎ ও ত্যাগী নেতৃত্ব সম্মেলনের মাধ্যমে আসবে বলে আশা করি। সিনিয়রদের মধ্যে থেকে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে পারলে ভালো হয়। বেশি জুনিয়ররা যদি নেতৃত্বে চলে আসে, তাহলে দীর্ঘদিন ধরে যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছে তারা তো দলে সুযোগ পাবে না। সম্মেলনে যে নেতৃত্ব আসবে তাতে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক কেউ থাকবে না। বর্তমান কমিটির যারা সদস্য ছিলেন তাদের থেকে নেতৃত্ব বাছাই করলে ভালো হয়। সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ উদ্দীপনা আছে। সম্মেলন সফল করতে বিভিন্ন উপকমিটি কাজ করছে। একটা শান্তিপূর্ণ দেখার মতো সম্মেলনে হবে।

নিজেদের দায়িত্বের সময় চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট ও থানা পর্যায়ে কিছু কমিটি দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। বড় দল হিসেবে কিছু সমস্যা ছিল বলেও স্বীকার করছেন অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন।

নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছি। বিপদে নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম। স্বেচ্ছাসেবক লীগ জনগণের ও মানুষের সেবা করার সংগঠন। করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে ছিলাম। কেন্দ্রঘোষিত সব কর্মসূচি পালন করেছি। দলের মেধাবী ত্যাগী ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের দিয়ে নতুন কমিটি হবে বলে আশা করি। সেই সঙ্গে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি যেন স্থান না পায় সে প্রত্যাশা করি।

জানতে চাইলে আরেক পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হেলাল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে  বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে রাজনীতি করে আসছি। কর্মাস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রাজপথে সক্রিয় ছিলাম, সব দুঃসময়ে ছিলাম। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে আমাকে বিবেচনা করবে। অতীত কী করে আসছি, বর্তমানে কী করছি, ভবিষ্যতে কী করতে পারব চিন্তা-ভাবনা করে যদি যোগ্য মনে করেন তাহলে বিবেচনা করবেন। নেতারা আমাকে বিবেচনা করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

তিনি আরও বলেন, দলের ভালোর জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন, তারা যা ভালো মনে করবেন সেভাবেই কমিটি করবেন।  তবে দলের ত্যাগী ও মেধাবীদের মূল্যায়ন করবে সে প্রত্যশা করি।

এদিকে এর বাইরে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনুসারীদের অনেকেই পদ প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির বিষয়ে চট্টগ্রাম সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ করছে, দলের প্রতি যাদের আন্তরিকতা আছে এমন নেতৃত্ব যেন নির্বাচন করা হয়। যারা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে আন্তরিক, যারা রাজনীতিকে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করবে না, এমন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। মাদাকাসক্ত কেউ যেন কমিটিতে স্থান না পায় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। 

কেএম/জেডএস/ওএফ