জুলাই সনদে স্বাক্ষর কেবল আনুষ্ঠানিকতা; বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, সনদে স্বাক্ষর করে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম সমর্থনের অঙ্গীকার করেছে। এখন সরকারের দায়িত্ব– যে সংস্কারগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা যায় এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি, সে সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে জুলাই বিপ্লবের সুফল জনগণের সামনে তুলে ধরা।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকার পল্টনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে পরিচালিত গণসংযোগের পূর্ব অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ সময় তিনি আরও বলেন, গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন করা। তবে অবশ্যই গণভোটের ব্যালটে ‘সংসদের উভয় কক্ষে ‘পিআর পদ্ধতি’ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

তিনি বলেন, যারা সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর বুঝে, তারা নাকি সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর বুঝে না! আসলে তারা সবই বুঝে, কেবল মেনে নিচ্ছে না। কারণ সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তারা একদলীয় শাসন কায়েম করতে পারবে না, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এজন্য তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন মেনে নিচ্ছে না।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, কোনো দলের চাওয়া না চাওয়াতে নয়; পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। 

তিনি বলেন, পিআর প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট দিলে জনগণ যেই রায় দেবে, জামায়াত তা মেনে নেবে এবং সব দলকে মানতে হবে। যারা পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করে তারা যদি জনগণের জন্য রাজনীতি করে, জনগণকে বিশ্বাস করে, তাহলে জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করতে আপত্তি কোথায়? আমরা যারা পিআর পদ্ধতির দাবি জানিয়েছি, আমরা গণভোটের রায় মেনে নিতে প্রস্তুত। 

তিনি আরও বলেন, যারা আওয়ামী লীগের মতোই ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে যায়, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, বিরোধী দলমতকে নিঃশেষ করতে চায়, মানুষের কণ্ঠরোধ করতে চায়, তারাই পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। কারণ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো দল এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কোনো সরকার স্বৈরচার হতে পারবে না। পিআর পদ্ধতির বিরোধী কেন করে, তাদের উদ্দেশ্য জনগণ বুঝে গেছে। তাদের উদ্দেশ্য অতীতের মতো আবার ক্ষমতায় বসে দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করা! জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে ৫ বছরে নয় এক বছরেই দেশকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।  

ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকা। এখানেই রয়েছে পিজি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বহু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে অতীতে জনসাধারণকে শোষণ করা হয়েছে। আগামীতে জনগণকে শোষণমুক্ত করতে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের বিকল্প নেই। অতীতে যারা বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে তাদের দ্বারা বৈষম্যহীন দেশ গড়া সম্ভব হবে না। বৈষম্যহীন দেশ গড়তে নতুন নেতৃত্বকে নির্বাচিত করতে– তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। 

সভা শেষে ড. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে নেতারা পল্টন-বিজয়নগর এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় নেতৃবৃন্দ স্থানীয়দের মাঝে জামায়াতে ইসলামীর লিফলেট বিতরণ করে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে সমর্থন কামনা করেন।

জেইউ/বিআরইউ