প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশে কোনো কাজ হয় না, তাই বাংলাদেশের গুম-খুন-লুটপাটের দায়ও প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

শুক্রবার (২৫ জুন) বিকেলে গণসংহতি আন্দোলন ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার কেবল চুরি-দুর্নীতি ও লুটপাটের টাকা ওপরতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত ভাগ-বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার, স্বাস্থ্যসেবাসহ যাবতীয় নাগরিক অধিকার রক্ষায় চূড়ান্ত ব্যর্থ এবং চরমভাবে গণবিরোধী।’

ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়ে একদিকে জনগণের জীবন-যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি করছে। অন্যদিকে বিকল্প কর্মসংস্থান না করে ৫০ লাখ পরিবারের আয়ের খাত ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ করছে। গণতন্ত্রের নাম করে সরকার মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। করোনা মহামারির বিপদ এবং নাগরিকদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে এই সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে হবে। অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। করোনার এই মহামারিতে জনগণকে গণটিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।’

দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের সকল খাত ভেঙ্গে পড়ছে। বহু খেয়েছেন, এবার একটু দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেন। কিন্তু আপনারা সেটি না করে মানুষ যখন একটু ব্যাটারি চালিত বা সাধারণ রিকশা চালিয়ে পরিবহনের সাথে যুক্ত থেকে নিজেদের পেটের ভাত জোগাড় করছেন, পুলিশ বাহিনী দিয়ে তাদের পেটে লাথি মারার ব্যবস্থা করেছেন। আপনার উন্নয়নের কথা আমরা ১২ বছর ধরে শুনে আসছি। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় এসব মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, পদ্মাসেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। ওই রিকশাওয়ালা শ্রমিক যে ট্যাক্স দেয় তা দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট হচ্ছে। আবার যে ঋণ করে উন্নয়ন বাজেট করা হয় সে টাকাও জনগণের পকেট থেকেই পরিশোধ করা হয়।’

ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে আমাদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা দেশকে ভালোবাসি শহীদের রক্তের ঋণের প্রতি আমাদের যে অঙ্গীকার আছে, আমাদের ভবিষ্যৎ আমরা এদেশেই দেখি। আমরা বিদেশে টাকা পাচারের কথা ভাবি না। কানাডা-মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানানোর চিন্তা করি না। মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মুক্তিযুদ্ধের এত বড় অপমান এদেশে আর কেউ করে নাই। এদেশে কোনো ন্যায়বিচার নেই, ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে আমাদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।’

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউট ঘুরে হাতিরপুল এসে শেষ হয়।

ঢাকা মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী মনির উদ্দীন পাপ্পুর সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য প্রবীর সাহার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখ্তার, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, কেন্দ্রীয় সংগঠক সৈকত মল্লিক, ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য আলিফ দেওয়ান, মাহবুব রতন, কেরানীগঞ্জ থানার সংগঠক বেলায়েত সিকদার, মতিঝিল থানার সংগঠক আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন শাখা নেতারা।

এইচআর/ওএফ