ওসমান বিন হাদির খুনিরা হামলার ছয় ঘণ্টা পর কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারল? এমন প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, দেশবাসীর প্রশ্ন কেন সরকার তাদেরকে (হাদির খুনি) গ্রেপ্তার করতে পারল না? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা কী করেছে? গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের সহযোগিতাকারী কেউ লুকিয়ে আছে কিনা তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত। 

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইয়ের অকুতোভয় বিপ্লবী যোদ্ধা শরীফ ওসমান বিন হাদির শাহাদাত উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইয়ের অকুতোভয় বিপ্লবী যোদ্ধা শরীফ ওসমান বিন হাদি শির উঁচু করে শহীদ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি একজন অত্যন্ত সৌভাগ্যবান শহীদ। 

গোলাম পরওয়ার বলেন, তার শাহাদাতের পর দেশবাসী তার অনেক বক্তব্য টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে শোনার সুযোগ পেয়েছেন। তার বক্তব্যে আমরা দেখতে পাই, তিনি বারবার শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। আল্লাহ তার শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেছেন। আজ তার দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন সার্থক হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিমের সঞ্চালনায় মাহফিলে বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চাকসুর সাবেক ভিপি অ্যাড. জসিম উদ্দিন সরকার এবং শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদির বড় ভাই ওমর বিন হাদি।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাড. ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, ড. আবদুল মান্নান।

গোলাম পরওয়ার বলেন, শহীদ ওসমান হাদির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সৎ জীবন দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছে। তার শাহাদাতের পরে মানুষের মধ্যে যে জোয়ার, জজবা ও আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে তা এক বিরল ঘটনা। গতকাল তার নামাজে জানাজায় সরকার প্রধান, উপদেষ্টা এবং দেশের রাজনৈতিক নেতারাসহ সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আল্লাহ তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তাকে দুনিয়ায় অতি উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন এবং আমরা আশাকরি আখিরাতেও আল্লাহ তাকে অতি উঁচু মর্যাদা দান করবেন। 

প্রধান উপদেষ্টা খুনিদের গ্রেপ্তার ও তদন্ত সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করায় প্রশ্ন তোলেন জামায়াত সেক্রেটারি। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য দেন। কিন্তু ওসমান বিন হাদীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যাপারে কোনো কথাই বলেননি। ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যাপারে অবশ্যই বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল। আমরা আশা করি, তিনি এ ব্যাপারে জাতির সামনে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। 

মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, আল্লাহতায়ালা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির আশা পূরণ করেছেন। ওসমান বিন হাদি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের সুখ-শান্তিতে বসবাসের উপযোগী একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার স্বপ্ন-আধিপত্যবাদ মুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলেই তার স্বপ্ন সার্থক হবে।

আলোচনা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে ওসমান হাদির শাহাদাত কবুল করে তাকে জান্নাতে অতি উচ্চ মর্যাদা দেওয়ার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

জেইউ/জেডএস