রাজধানীর রাজপথ আজ কথা বলছে। তবে সে ভাষা স্লোগানের নয়, বরং গভীর শোকের। ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে যাওয়া এক মুহূর্তের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে ঢাকা আজ রূপ নিয়েছিল এক বিশাল জনসমুদ্রে। ক্যামেরার লেন্স যেদিকেই ঘুরেছে, ধরা পড়েছে কেবল মানুষের ভিড় আর অশ্রুসিক্ত মুখ।

ড্রোন ফুটেজে জনসমুদ্রের ব্যাপ্তি আকাশ থেকে তোলা ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাপিয়ে শাহবাগ এবং মহাখালী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল মানুষের মাথা। কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, বরং প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখার এবং শেষ বিদায় জানানোর আকুলতা নিয়ে মানুষ জমায়েত হয়েছিল এই বিস্তৃত এলাকায়।

স্থিরচিত্রগুলোতে ধরা পড়েছে সেই বাঁধভাঙা জোয়ার, যা স্মরণকালের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

ছবিতে ধরা পড়েছে লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো কফিনে নেত্রীর শেষ যাত্রার সেই বিষণ্ন মুহূর্ত, যা দেখে লাখো মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

কূটনৈতিক সম্মান ও রাষ্ট্রীয় প্রটোকল এ বিদায় কেবল দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। দেখা গেছে বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের সরব উপস্থিতি।

উপদেষ্টারা বিদেশি অতিথিদের সাথে শোক ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

শেষ যাত্রার পূর্ণতা বিকেলে জানাজা শেষে যখন প্রিয় নেত্রীকে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে হাজারো মানুষের হাত তোলার দৃশ্য—সবাই যেন শেষবারের মতো তার মাগফিরাত কামনা করছিলেন। ছবির ফ্রেমে বন্দি এই দৃশ্যপটগুলো কেবল সংবাদ নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য দলিল হয়ে রইল।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্‌যন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৩ নভেম্বর আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। দেড় মাসের মতো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল তিনি মারা যান।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৪৩ বছর দলকে নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন। এরপর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয় ‘আপসহীন নেত্রীর’ উপাধি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।

চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়াকে কখনো তার বিরোধীদের আক্রমণ করে কথা বলতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলি না।

এমজে