চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। একইসঙ্গে সংগঠনটি সিআরবির বাইরে চট্টগ্রাম শহরের অন্যত্র সরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি তুলেছে।

শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকালে নগরীর হাজারী লেনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভা থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে।

সভায় সিপিবি নেতারা বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তাতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। জনমত গ্রহণ না করে সরকার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী সিদ্ধান্তে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রামবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। 

তারা বলেন, একমাসেরও বেশি সময় ধরে সিপিবিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সভা-সমাবেশ করে এ উদ্যোগ বাতিলের দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। সরকার অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে অনড় আছে।

চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে সিপিবি নেতারা আরও বলেন, চট্টগ্রাম শহরে শুধু সিআরবিই ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে সর্বশেষ একমাত্র উদ্যান, যেখানে নানা বয়সী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ গিয়ে একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে। অথচ এই সিআরবিকেও ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে।

সভায় আরও বলা হয়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা সিআরবি। এখানে মুক্তিযুদ্ধে ৯ জন শহীদের কবর আছে। হাসপাতাল হলে সিআরবিতে নতুন নতুন দালান, অবকাঠামো, দোকানপাট, পার্কিং, ফার্মেসি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবাসিক ভবনে ছেয়ে যাবে। পুরো এলাকা জঞ্জালময় ও কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠবে। শতবর্ষীসহ অন্তত ৩০০ গাছ কাটতে হবে। না কাটা হলেও হাসপাতালের পরিবেশগত প্রভাবে এসব গাছ বেশিদিন টিকবে না। সিআরবি পরিণত হবে মরুদ্যানে। 

নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম শহরে আর বেসরকারি হাসপাতালের প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো একটি আধুনিক, উন্নতমানের প্রতিষ্ঠান, যেখানে গরীব মানুষ চিকিৎসা সুবিধা পাবে। সরকারি উদ্যোগে সিআরবির বাইরে চট্টগ্রাম নগরীর যেকোনো স্থানে এমন একটি হাসপাতাল হোক। 

সিপিবির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুল নবীর সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. মছিউদ্দৌলা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অমৃত বড়ুয়া, উত্তম চৌধুরী, নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া দেন।

কেএম/আরএইচ