বৈঠকে বসছে শুরা কমিটি
শফী-বাবুনগরীর পর কে আসছেন হাটহাজারী মাদরাসার নেতৃত্বে?
কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ঘাঁটি বা আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) পদে নতুন মুখ আসছে বুধবার। একই দিন সহকারী মহাপরিচালক (নায়েবে মুহতামিম) ও শিক্ষা পরিচালকও (শায়খুল হাদিস) নির্বাচন করা হবে।
কারা আসছেন এসব পদে তা নির্বাচন করতে বুধবার বৈঠকে বসবেন শুরা সদস্যরা। এর মধ্যে মাদরাসার মহাপরিচালক পদটি প্রায় এক বছর ধরে শূন্য আছে।
বিজ্ঞাপন
মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তিন পরিচালক থেকে কেউ মহাপরিচালক হচ্ছেন না কি বাইরে থেকে কেউ এ পদে আসছেন সে ব্যাপারে শুরা কমিটির কেউ মুখ খুলছেন না। তারা বলছেন, বুধবারের বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত হবে।
১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফী। শুধু এই মাদরাসা নয়, দীর্ঘদিন পুরো কওমি অঙ্গনেই ছিল তার একচ্ছত্র প্রভাব।
বিজ্ঞাপন
আহমদ শফী যখন মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন তখন এর সহকারী মহাপরিচালক ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমির ছিলেন আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
২০২০ সালের ১৭ জুন বাবুনগরীকে মাদরাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় শেখ আহমদকে।
নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন আল্লামা শফী। পরদিনই রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শফীর মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদরাসার দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। তখন শুরা কমিটির এক বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মাদরাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে রাখা হয়- মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামী, আল্লামা শেখ আহমেদ ও মাওলানা ইয়াহিয়াকে। তবে অদৃশ্যভাবে বাবুনগরীই মাদরাসার পরিচালনাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতেন বলে জানা যায়। যে কারণে মহাপরিচালক পদে কেউ না থাকলেও শূন্যতা অনুভব করেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত ১৯ আগস্ট জুনায়েদ বাবুনগরী মারা যান। এর মধ্য দিয়ে মাদরাসা পরিচালনায় আবার নতুন করে সংকট দেখা দেয়। তাই মাদরাসায় মহাপরিচালক নিয়োগ, শিক্ষা পরিচালক বা শায়খুল হাদিস নিয়োগসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল বৈঠকে বসছে মাদরাসার শুরা কমিটির সদস্যরা। শুরা সদস্যরা বলছেন, বৈঠকে মহাপরিচালক নিয়োগসহ মাদরাসার সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
শুরা কমিটির সদস্য ও নাজিরহাট বড় মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল সকাল ১০টায় শুরা কমিটির বৈঠকটি শুরু হবে। বৈঠকে ১১ জন শুরা সদস্য অংশ নেবেন। কাল আমাদের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে মাদরাসায় একজন মুহতামিম নিয়োগ করা। এছাড়াও মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক ও শাইখুল হাদিস নিয়োগ করা হবে কাল।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও শুরা কমিটির বৈঠকে মাদরাসার পরিচালনা, পড়ালেখা, আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মাদরাসার মহাপরিচালক পদে কে আসতে পারেন- এ প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান কাসেমী বলেন, বৈঠকের আগে বলা যাবে না। বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে। আগে থেকে বলা যায় না।
তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, আহমদ শফী পরবর্তী হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন মাদরাসা পরিচালনার তিন সদস্য মুফতি আবদুল সালাম চাটগামী, আল্লামা শেখ আহমদ ও মাওলানা ইয়াহিয়া।
এ বিষয়ে হাটহাজারী মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা শেখ আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবারের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শুরা বৈঠকের পর বাকি সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন। বুধবারের বৈঠকে মাদরাসার শুরা কমিটির সদস্য বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
মহাপরিচালক হিসেবে আপনার নাম আলোচনায় রয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। শুরা কমিটির সদস্যরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রসঙ্গত, হাটহাজারী মাদরাসায় ১৩ জন শুরা সদস্যের মধ্যে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মাওলানা নোমান ফয়েজী মারা গেছেন। বর্তমানে শুরা সদস্যের সংখ্যা ১১ জন। মাদরাসাটি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কেএম/এনএফ/জেএস