বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দলটির নেতাকর্মীরা সঠিক পথে হাঁটছে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি নেতারাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সংবিধান ও আইন দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক নিয়ম-নীতির মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার সবটুকু সুযোগ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মানবিক হৃদয়ের কল্যাণে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও খালেদা জিয়া বাসায় থাকছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ পাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, হতে পারে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইনের চোখে তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বর্তমান পরিচয় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আজ মির্জা ফখরুল সাহেব বড় বড় কথা বলেন। কারও চিকিৎসার নামে জনগণকে জিম্মি করা যাবে না। কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে। দেশবিরোধী এ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে প্রতিহত করতে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান ও সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। যারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে, আমরা তাদের সমুচিত জবাব দেবো। 

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নেতারা বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে সকাল-বিকেল অযৌক্তিক দাবি তুলে যাচ্ছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসা দেশের আইনের মধ্যে পড়ে না। দণ্ড স্থগিত অবস্থায় কেউ দেশের বাইরে যেতে পারে না। একমাত্র দণ্ড মওকুফ হলে তিনি বিদেশে যেতে পারেন। দোষ শিকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে। রাষ্ট্রের অভিভাবক দয়ালু মানুষ। তিনি চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় রাজনৈতিক ফায়দা খুঁজছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কোন বক্তব্য নেই। প্রথম থেকেই রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে ফায়দা লোটার অপচেষ্টায় ব্যস্ত বিএনপি ও মির্জা ফখরুলরা।  

তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মৃত্যু কামনা করি না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা আমাদের আছে। আমাদের নেত্রী, মানবতার মা শেখ হাসিনা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন। আমরাও চাই তিনি উন্নত চিকিৎসা পান। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক কথা বলেনি। ড্যাবের নেতা, বিএনপি নেতারা চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমি বিএনপির প্রতি, তার পরিবারের প্রতি বলতে চাই, তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনতে পারে। সেখানে তাদের কোনো প্রচেষ্টা, কোনো আগ্রহ দেখিনা।  তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা করে না। তাদের চিন্তা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা।

গত ১২ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিউইতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। তিনি লিভার সিরোসিসসহ অন্যান্য জটিলতায় ভুগছেন। দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। 

এইউএ/এসএম