তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি। তবে দলটির নেতারা বলছেন, ‘তাকে শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর বিএনপির নেতারা ওই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টেকে বলেন, ‘আমরা শুধু তার পদত্যাগের দাবি করি নাই, একই সঙ্গে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেও বলেছি। তিনি যে ভাষায় জিয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তা কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জিয়া পরিবার নিয়ে মুরাদ যেভাবে কথা বলেছেন, তা পুরোপুরি নারী সমাজের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তারপরও সরকার একটি ভালো কাজ করেছে, তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান / ফাইল ছবি

তিনি আরও বলেন, সরকার যেভাবে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার ওপর নির্যাতন করছে, আসলে এটা তো (তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিষয়) কিছুই নয়। তবে, তার শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, জাতির কাছে ক্ষমাও চাইতে হবে।

সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

কেন পদত্যাগের নির্দেশ

সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল টকশোতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। এর জেরে কয়েকদিন ধরে অনলাইন-অফলাইনে ব্যাপক সমালোচিত হন প্রতিমন্ত্রী। নারী অধিকারকর্মীদের পাশাপাশি সরকারদলীয় প্রভাবশালী অনেক নেতাও বলেন, প্রতিমন্ত্রী মুরাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

জাইমা রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন মহলে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের পদত্যাগের দাবি ওঠে। বিএনপিসহ নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন তার পদত্যাগের দাবি করে বিবৃতি দেয়। এমনকি ক্ষমতাসীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেত্রীরাও মুরাদের পদত্যাগের দাবি জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান / ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা ব্যক্তির মুখের ভাষা শুনে মনে হচ্ছে, আমরা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছি।’ একই হলের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিশিতা ইকবাল বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী এভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই এবং তার পদত্যাগ দাবি করি।’

তারেককন্যাকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রত্যাহার করবেন না বলে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে জানান প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। তিনি বলেন, ‘মন্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই।’

এছাড়া রোববার দিবাগত রাত থেকে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের নামে কল রেকর্ডের একটি অডিও ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। ৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের অডিওতে একজন নারীর নামও এসেছে। জানা যায়, ওই নারী ঢাকাই সিনেমার একজন নায়িকা।

অডিওতে ওই পুরুষকে (যাকে মুরাদ হাসান বলা হচ্ছে) অশ্লীল নানা কথা বলতে শোনা যায়। এ কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

শেষ রক্ষা হলো না তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে তাকে / ফাইল ছবি

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে মন্তব্যে বিতর্ক

বেশ কয়েকদিন আগে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা, না থাকা নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন ডা. মুরাদ। পরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি এমন কোনো কথা বলিনি যা আমার প্রিয় ধর্ম ইসলামের বিপক্ষে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। আমাদের কোনো রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। এটাই বলেছি আমি। আমি বলেছি, বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে হাত দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ও এরশাদ।’

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখেছিলেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংবিধানে থাকতে পারে না। এরশাদ যুক্ত করেছিলেন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। রাষ্ট্রধর্ম বলতে কিছু নাই। ধর্ম যার যার। এ নিয়ে উগ্র হওয়ার, ধর্মান্ধ হওয়ার কিছু নাই।

ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এ রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

এএইচআর/এমএআর/