আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মতো পরিণতি হতে পারে সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের। 

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় প্রধান হুইপ নূর-ই-এলাহী চৌধুরী লিটন ঢাকা পোস্টকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এর আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘মুরাদ হাসানকে এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-এলাহী চৌধুরী লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতীতের দৃষ্টান্তগুলো ফলো করুন। লতিফ সিদ্দিকীর সময় কী হয়েছিল সেটা দেখুন। 

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এর আগে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন তিনি। 

ওই সময় প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান ঘটানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের (১) দফার (গ) উপ-দফা অনুযায়ী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান হয়।

ওই দিন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি ও প্রাথমিক সদস্য পদ অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়।

ডা. মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দল থেকে শাস্তির একাধিক স্তর আছে। যেমন পদ থেকে অব্যাহতি ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার। গঠণতন্ত্র মোতাবেক প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করতে হলে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে হয়। অভিযুক্ত সদস্যকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। তারপর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে অপরাধের মাত্রা, পারিপার্শ্বিকতা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তিনি বলেন, দলের পদচ্যুতি ঘটলে সংসদ সদস্য পদ যায় না। এমনকি দল থেকে বহিষ্কার হলেও সংসদ সদস্য পদ খারিজের সরাসরি বিধান নেই। এটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে প্রথাগত প্র্যাকটিস হচ্ছে, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে পদত্যাগের অনুরোধ করেন, তিনি পদত্যাগ না করলে তাকে অপসারণের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন। তেমনি দল থেকে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য অপরাধ করলে দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে পদত্যাগের অনুরোধ করলে তিনি তা প্রতিপালন করেন। প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে এ পন্থা অনুসৃত হয়েছে। ডা. মুরাদের বিষয়ে দল কি সিদ্ধান্ত নেবেন তা বলার অধিকার আমার নেই। আমি কেবল প্রক্রিয়াটি বললাম।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) ওই দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

সদস্যদের আসন শূন্য হওয়ার ৬৭ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে:  (১) কোন সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি (ক) তাহার নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে নব্বই দিনের মধ্যে তিনি তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করিতে অসমর্থ হন তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ মেয়াদ অতিবাহিত হইবার পূর্বে স্পিকার যথার্থ কারণে তাহা বর্ধিত করিতে পারিবেন; (খ) সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিত থাকেন; (গ) সংসদ ভাঙিয়া যায়; (ঘ) তিনি এই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন অযোগ্য হইয়া যান; অথবা (ঙ) এই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। (২) কোন সংসদ-সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন, এবং স্পিকার- কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।

এইউএ/এসএম