নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে পাত্তাই দিলেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘কিসের সংলাপ? এ সংলাপ ইতোমধ্যেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি এ সংলাপে কোনো লাভ হবে না। অর্থহীন সংলাপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই। আমাদের পরিষ্কার কথা, সবার আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তারপর পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন। এটা একমাত্র পথ, এর বাইরে আর কোনো পথ নেই।’

শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এ মানব সমাবেশের আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন জনগণের দাবি, এটা গণদাবি। এ দাবি অবশ্যই সরকারকে মেনে নিতে হবে। যদি সরকার এ গণদাবি মেনে না নেয়, তাহলে গণদাবি অস্বীকার করার জন্য অতীতের সরকারগুলোর যে অবস্থা হয়েছে এ সরকারেরও সেই পরিণাম ভোগ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। গত দেড় থেকে দুই মাস নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। সারা দেশে আমাদের অসংখ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটি সমাবেশ থেকে লাখো মানুষের কণ্ঠে একটি আওয়াজ এসেছে - বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।’

খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বেরও প্রতীক। বাংলাদেশকে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতীক। সরকার কিছুতেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে চায় না। কেন চায় না? কারণ তারা জানে, বেগম খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হন তাহলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে। এ তরঙ্গে সরকার টিকে থাকতে পারবে না। এ কারণেই তারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি চায় না।’

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নাম ধরে কোনো কর্মসূচি দিলে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে, অংশগ্রহণ করে আন্দোলন করার জন্য, এ সরকারের পরিণতি দেখার জন্য। প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার ভাষণে বলেছেন জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত। এর চেয়ে বড় ঠাট্টা-মশকরা কি আর কিছু আছে? একে বলে মশকরা করা, এ মশকরা করার দিন শেষ। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে মুক্তি দিতে হবে শেখ হাসিনাকে। তাকে বিদায় দিতে হবে, তার কাছে আকুতি মিনতি করলে চলবে না। ডানে-বায়ে যাওয়ার জায়গা নেই, বিদেশে যাওয়ার ভিসা বন্ধ।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গত ১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তারা সবই লুট করেছে। জনগণকে সরকার বলে, বাংলাদেশ উন্নতির মহাসোপানে, মহাসড়কে উঠেছে। অথচ চার কোটি লোক বেকার। করোনার মধ্যে আড়াই কোটি মানুষ কষ্টে আছেন। প্রত্যেক বছর বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়। এটা কারা করে, বিএনপির লোক? বিরোধী দল? এটা করে যারা ক্ষমতায় আছে তারা। বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবারে ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের আদালতে গেলে কোনো মামলা নেয় না, পুলিশ জিডি নিতে চায় না এ চোর-ডাকাতদের বিরুদ্ধে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এবার সরকার ধরা খেয়েছে আমেরিকার সরকার দেখে। আমাদের দেশে ব্যাংক চুরি করা যায়, ব্যাংকের টাকা লুট করা যায়। কিন্তু ওই সব দেশে পারা যায় না। আমেরিকা সরকার বলেছে, গোপনে যারা সে দেশে টাকা এনেছে তাদের তালিকা করতে। এখন আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের ঘুম নেই।’

মান্না বলেন, ‘এরা নির্বাচন কমিশন বানাতে পারবে না, যেটা বানাবে সেটা মানি না। সেই ইসির অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এরা চলে যাবে। চলে যাওয়ার পর আমরা যারা আন্দোলন করেছি, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নতুন সরকার বানাব, নতুন ইসি বানাব, একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। সেই দেশ হবে সুখী-সমৃদ্ধ।’

এমএইচএন/এসএসএইচ