আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে ‘লাগাতার মিথ্যাচার-অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর’ দাবি করে প্রতিবাদ জানানো হয় বিবৃতিতে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছে। তিনি জাতির প্রত্যাশার কথা বলেছেন। আমরা বিএনপি’র মর্মবেদনা বুঝি। রাজনীতির মাঠে চরম ব্যর্থতায় নিপতিত বিএনপি এখন নিজেদের হতাশা ও নিরাশার মাপকাঠিতে জনপ্রত্যাশা পরিমাপের ব্যর্থ চেষ্টায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক বিধান ও আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তারা প্রত্যেকেই আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। পেশাগত কাজের বাইরেও আপন কর্মের মহিমায় তারা স্বতন্ত্র পরিচিতি অর্জন করেছেন। দেশ-জাতির প্রতি তাদের ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা প্রশ্নাতীত।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আইন অনুযায়ী সাংবিধানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও দেশপ্রেমিক বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে- সেটির প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ইতোমধ্যে সার্চ কমিটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।

সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রত্যয় দৃপ্ত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে কমিটি। জনগণ প্রত্যাশা করে, একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের যে শপথ নিয়ে সার্চ কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে- তা পরিপূর্ণ রূপে বাস্তবায়িত হবে।

আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশাকে ধারণ করেই রাজনীতি করে- এমনটা দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র শক্তিই হলো জনগণ। জনপ্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি এবং পথচলা।

তিনি বলেন, অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং খুনিচক্র ও স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বার্থ সংরক্ষণের শপথের মধ্য দিয়ে বিএনপি’র পথ চলা শুরু হয়। নতুন করে পাকিস্তানি ভাবধারার সামরিক স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয় বাঙালি জাতি। দেশদ্রোহী-জাতিদ্রোহী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী খুনি-ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই আবর্তিত হতে থাকে বিএনপি’র রাজনীতির গতিপথ।

কাদের বলেন, বিএনপি এখনও সেই অপরাজনীতিতে ব্যস্ত। তাদের মুখে জনপ্রত্যাশা শব্দটি মানায় না। জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করতে হলে জনগণের জন্য রাজনীতি করতে হয়। জনগণের প্রতি আস্থাশীল হতে হয়, জনমত যাচাইয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সৎ সাহস থাকতে হয়। যা বিএনপির নেই এবং কখনো ছিলও না।

তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় দলীয় ও গোষ্ঠী স্বার্থে রাজনীতি করে। তাই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন, তখন বিএনপি নেত্রী কী আচরণ করেছিলেন দেশবাসী তা ভুলে যায়নি! সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য তখন বিএনপিকে আহ্বান জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, কিন্তু সংবিধানের মূল চেতনায় সমুন্নত গণতান্ত্রিক রীতি বাস্তবায়নে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি বিএনপি। উপরন্তু তারা আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। তাদের মূল এজেন্ডা ছিল যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা।

তিনি বলেন, আজও তারা গণতন্ত্রের রীতি-নীতিকে বর্জন ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের স্টেশনে রাজনীতির যে ট্রেনে বিএনপি উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল, তা আজ বহু দূর এগিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ঘড়ির কাঁটা কারও জন্য থেমে থাকে না, তা আপন গতিতে এগিয়ে চলে। রাজনীতির ভুল ট্রেনে ওঠা বিএনপি নেতারা এখন পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মের অন্ধকার দিশেহারা যাত্রীর মতো প্রলাপ বকছে।

বিএনপি নেতাদের বর্জন ও পরিত্যাগের ভ্রষ্ট নীতি পরিহার করে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুশীলনের আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।96198

এইউএ/এমএইচএস