পর্তুগালে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত
নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলার স্মরণে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করেছে পর্তুগালের বাংলাদেশ দূতাবাস ।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে সংসদ সদস্য, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেমিনারের শুরুতে উপস্থিতরা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, বাঙালিদের সরকার গঠনের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান সেনারা অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যা শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস জুড়েই হানাদার বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন অব্যাহত ছিল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই বধ্যভূমি ও গণকববর ছড়িয়ে আছে । এখনো নতুন নতুন বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাটি সবচেয়ে ভয়াবহ হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো এটিকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ গণহত্যার যথাযথ স্বীকৃতির অভাবই মূলত পরবর্তীতে সংঘটিত গণহত্যাগুলোতে নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে ।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
সেমিনারে মূল বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগিজ সংসদ সদস্য ড. পাওলো নেভেস এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিব কুমার সিং । ড. সিং বাংলাদেশের গণহত্যার বিভিন্ন দিক বিশেষকরে অমানবিকীকরণ, উচ্ছেদ ও অস্বীকারের দিকগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কৃতকর্মের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন । তিনি জাতিসংঘ সহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে অবিলম্বে বাংলাদেশের গণহত্যাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ারও আহ্বান জানান।
সংসদ সদস্য ডা. পাওলো নেভেস তার বক্তব্যে ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অসামান্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্বমঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।
সেমিনারে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্জনসমূহ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের যুদ্ধকালীন গণহত্যার ফুটেজ এবং বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে কয়েকটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে অতিথিদের মধ্যে দুটি পুস্তিকাও বিতরণ করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে দূতাবাসে একটি আলোর মিছিল বের করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা মোমবাতি হাতে এ মিছিলে অংশ নেন।
আরএইচ