কেউ যদি একবার পর্তুগালে প্রবেশ করে, তাহলে খুব অল্প সময়ে সে দেশটির অস্থায়ী নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে।

আটলান্টিক মহাসাগরের পাড় ঘেঁষে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান পর্তুগাল। ভ্রমণ গন্তব্যের পাশাপাশি সহজে বৈধতা পাওয়া এবং পর্তুগিজ সরকারের অভিবাসীদের প্রতি স্বাগত মনোভাবের কারণে বর্তমানে দেশটিতে ভিড়ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিক।

ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্তুগাল। ইউরোপের সর্বপশ্চিমে দেশটির অবস্থান। এর পশ্চিম ও দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর ও পূর্বে স্পেন। সাংবিধানিক নাম পর্তুগিজ রিপাবলিক দেশ হিসেবে প্রথম গঠিত হয় ৮৬৮ সালে। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজতন্ত্র ও বিভিন্ন অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশটিতে প্রথম সংবিধান রচিত হয় ১৮২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর।তবে বর্তমান সংবিধান পুনরায় রচনা করা হয় ১৯৭৬ সালের ২৫ এপ্রিল। দেশটির রাষ্ট্রীয় ভাষা পর্তুগিজ।

৩৫ হাজার ৬০৯ বর্গমাইলের পর্তুগালে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৮৪ ভাগ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তাছাড়া বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সেনজেন অন্তর্ভুক্ত দেশটির প্রচলিত মুদ্রা ইউরো। এখানকার জি এন আই মাথাপিছু ২৩ হাজার ডলার (কমবেশি), যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো। সময় গ্রীনউইচ মীন টাইম (GMT-00) শূন্য। তবে গ্রীষ্মে এক ঘণ্টা বাড়ানো হয় এবং শীতকালে তা পেছানো হয়। উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে এখানকার মানুষের খাবার প্রধানত মাছ, আলু, ভাত, প্রাণিজ মাংস। পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই দুধ থেকে উৎপাদিত খাবার তাদের পছন্দের তালিকায় স্থান পায়।

অভিবাসন প্রক্রিয়া

অভিবাসীদের জন্য পর্তুগালে নিয়মিতভাবে বসবাস করা খুবই সহজ। বলতে গেলে কেউ যদি একবার পর্তুগালে প্রবেশ করে, তাহলে খুব অল্প সময়ে সে দেশটির অস্থায়ী নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, যেকোনো ব্যক্তি পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করলে এবং পর্তুগিজ ভাষায় দক্ষতা আনতে পারলে ও কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকলে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। যেটা খুবই সহজ প্রক্রিয়া।

বেশ কয়েকটি উপায়ে পর্তুগালে নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং খুবই প্রচলিত প্রক্রিয়া হচ্ছে, একজন কর্মক্ষম বা কর্মজীবী হিসেবে দেশটিতে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে ইমিগ্রেশন সার্ভিস আবেদন করা। এ আবেদনের আগে ৪/৫টি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। যেমন- পর্তুগালে প্রবেশের প্রমাণপত্র, স্থানীয় ইনকাম ট্যাক্স নাম্বার, সোশ্যাল নাম্বার, ঠিকানার প্রমাণপত্র, কাজের চুক্তিপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজ দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি।

এর বাইরে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে, এখানে সন্তান জন্মগ্রহণ করলে (স্কুল গমন পর্যন্ত প্রমাণপত্রসহ), স্থানীয় নাগরিককে বিয়ে করলে এখানে বৈধভাবে বসবাস করার আবেদন করা যায়। শরণার্থী হিসেবেও পর্তুগালে আশ্রয় আবেদন করা যায়। গত বছর দেশটিতে নতুন একটি নাগরিকত্ব আইন পাস হয়েছে। সেটা হলো- এক বছরের বেশি সময় ধরে বাস করা নিয়মিত অনিয়মিত কোনো ব্যক্তির যদি সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তবে সে জন্মসূত্রে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পাবে।

পর্তুগালের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে খুব কমসংখ্যক ছাত্র/ ছাত্রী আসেন। অর্থনীতি অনগ্রসরতা ও শিক্ষার ফাঁকে কাজ করার সুযোগ না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখানে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইরাসমুস মুন্ডাস স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পর্তুগালে বাংলাদেশি প্রবাসী

পর্তুগালে বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশিরা চাকরির সঙ্গে যুক্ত। তবে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এবং কারিগরি জ্ঞানের অভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অফিস-আদালতে খুব সহজেই কাজ করার সুযোগ হয় না। এরা সাধারণত বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট তথা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কৃষিকাজে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী নিযুক্ত আছেন। এছাড়া আইটি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষকতা, হিসাব রক্ষক, ডাক্তার ইত্যাদি বিভিন্ন পেশায়ও বাংলাদেশি প্রবাসীরা কাজ করছেন।

চাকরি ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিরা পর্তুগালে বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। এদের বেশিরভাগ অংশই পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ পাইকারি এবং খুচরা বিভিন্ন সুভেনির শপ, গ্রোসারি, কাবাবশপ, রেস্টুরেন্ট, ছোট আকারের আবাসিক বোর্ডিং, ট্রাভেলস মানি এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি ব্যবসা করে থাকেন।

পর্তুগালের বেশিরভাগ অভিবাসীদের মধ্যে ইতিপূর্বে পর্তুগিজ দ্বারা শাসিত দেশগুলোর জনগণের আধিক্য সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী হচ্ছে ব্রাজিলিয়ান। এছাড়া অ্যাঙ্গোলা, কাবু বেরদে, মোজাম্বিক, মাকাও ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দেশটিতে ভারতের অভিবাসী সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর পাকিস্তান এবং তিন নম্বরে বাংলাদেশের স্থান।

পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেনভুক্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশটির অর্থনীতি কিছুটা অনগ্রসর। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে পর্তুগালের অর্থনীতি অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে পর্তুগাল ইউরোপের অন্যান্য প্রথম শ্রেণীর দেশের সমান্তরালে এসে দাঁড়াবে।

এমএইচএস