বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্থাপত্য শৈলীতে ভরপুর একটি দেশ পর্তুগাল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখানেও করোনার হানা। তবে প্রথম দিকে পর্তুগাল বেশ ভালোভাবেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিল। কিন্তু তৃতীয় ধাপে সেটা যেন কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেল। এর জন্য দায়ী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন। তাছাড়া বড়দিন ও নতুন বছরে পারিবারিক আয়োজনকেও এর জন্য কিছুটা দায়ী করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা।

দেশটিতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে একদিনে সংক্রমণের সংখ্যা ১০ হাজারের উপরে উঠতে থাকে এবং মাসের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিকে একদিনে সংক্রমণ ১৬ হাজার ছাড়িয়ে যায়, যা প্রথম ধাপের আঘাতে এক মাসের সংক্রমণের সমতুল্য। এছাড়া মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিন দুইশ ছাড়াতে থাকে।

হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে পর্তুগাল। যে পরিস্থিতি মানুষ আগে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে দেখেছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র পুরনো সক্ষমতায় পৌঁছে গেছে। একই ঘটনা ঘটে পর্তুগালের হাসপাতালগুলোতে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমন অস্ট্রিয়া পর্তুগালের রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাছাড়া জার্মানি সরঞ্জামসহ মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে। যদিও করোনা মহামারির শুরু হওয়ার পর পর্তুগাল আগের সক্ষমতার দ্বিগুণ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বাড়িয়েছিল। তবে রোগীর ঢল তাতে সংকুলান করা যায়নি।

পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্তুগিজ সরকার কঠোর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, বলতে গেলে সরাসরি উপস্থিতি সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। খুব কড়াকড়ির মাঝে জরুরি অবস্থা চলছে। নিতান্তই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে। প্রয়োজনে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে অনেকেই জরিমানার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে সব জরুরি সেবাগুলো চালু রয়েছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, রেস্টুরেন্টে হোম ডেলিভারি ও টেক ওয়ে, ফার্মেসি, ক্লিনিক, সুপার মার্কেটসহ জরুরি খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্পেনের সঙ্গে নৌ এবং স্থল সীমান্ত যোগাযোগ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পর্তুগালে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিক ও স্থানীয় নাগরিকদের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশে যেতে ও ফিরতে পারছেন প্রবাসীরা।

তবে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্তুগাল সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে লাঘব করা সম্ভব হয়েছে। কেননা প্রথমবারের মত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সর্বনিম্ন করোনার সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে ১,৯৪০ জন ও মৃত্যু ৬৭ জন। যা গত ৯ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন সংক্রমণ। পর্তুগালে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৯ জন ও মারা গেছেন করেছেন ১৫ হাজার ৮২১ জন। ৬ লাখ ৯১ হাজার ৮ শত ৬৬ জন ইতোমধ্যে রোগমুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৮৭ হাজার ৮২ জন রোগী চিকিৎসাধীন।

পর্তুগালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে রোগীদের চাপ ধীরে ধীরে কমছে তবে কিছুটা সময় লাগবে। অস্থায়ী যেসব হাসপাতাল ছিল তা খালি করা হয়েছে। অপরদিকে পর্তুগালের জনসাধারণ সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে বাইরে চলাফেরা কমিয়ে দিয়েছিল। ফলে খুব দ্রুত একটি খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া থেকে পর্তুগাল রক্ষা পেয়েছে। যার ফলে শুক্রবার সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে জনমনে স্বস্তি এসেছে।

এসএসএইচ