প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অভিবাসনের কারণে সভ্যতার পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত পৃথিবীর সৃষ্টিও এভাবে। উদাহরণস্বরূপ যদি একটি দেশের কথা বলি, যেমন আমেরিকা আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া পায় ও পরে একটি আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠেছে ইউরোপীয়রা সেখানে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন করার কারণে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য সেই সতেরো শতকে পাড়ি জমান। পরে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। খোদ স্থায়ী আদিবাসীরা এক সময় ওই অঞ্চল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এভাবে বর্তমানেও মানুষ উন্নত জীবনের খোঁজে বিভিন্ন উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

ইউরোপের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা বৈধ-অবৈধ পথে পাড়ি জমান। পরে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উন্নত দেশগুলোকে নির্বাচন করেন বসবাসের জন্য। তবে ইউরোপের অর্থনৈতিক বিচারে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে অভিবাসন প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ হলেও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে তা খুবই কঠিন। তাই উন্নত দেশগুলোতে স্থায়ী হওয়ার জন্য তারা এসাইলাম বা আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। তবে বেশিরভাগ আশ্রয় আবেদন উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বাতিল হয়ে যায়।

ইউরোপে স্থায়ী হতে বাংলাদেশিদের আগ্রহও বাড়তি দিকে। যার কারণে দেখা যায়, প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি নানা উপায়ে ইইউতে উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। যেমন গেল ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রায় ১১ হাজার দুইশ ৬৯ জন বাংলাদেশি অভিবাসী আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। এর মধ্যে মাত্র ৩৭৪ জনের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়। এছাড়া গত বছর সাবসিডিয়ারি প্রটেকশনের আওতায় ৮৭ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়। সর্বমোট ৯ হাজার দুইশ ৩৯ জন বাংলাদেশি আশ্রয় আবেদনকারীকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয় ইইউর দেশগুলো। বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার ৩২টি আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশিদের আবেদন গ্রহণের হার মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত এক বছরে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩০০ জন অভিবাসী আশ্রয় আবেদন করেন, যদিও তা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম। এই আবেদনের ওপর ৩২ শতাংশ মঞ্জুর করা হয়। আবেদনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইরাক ও পাকিস্তানের নাগরিকদের করা। ভারতীয় উপমহাদেশে আবেদনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পরেই অবস্থান ভারত ও নেপালের।  

এসএসএইচ