যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে চার দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার ক্যাম্প চালু হয়েছে। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) থেকে শুরু এ ক্যাম্প চলবে সোমবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ ক্যাম্প থেকে কনস্যুলার সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। হ্যামট্রামিক শহরের আমিন রিয়েলেটির অফিসে স্থাপিত ভ্রাম্যমাণ এ ক্যাম্পটি সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। 

প্রবাসী বাংলাদেশিদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস চার দিনের এ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। এখান থেকে নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর), দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (ডিএনসি), অ্যাটেস্টেশন অব ডকুমেন্ট/পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (পিওএ) ও বার্থ রেজিস্টেশন সার্টিফিকেট (বিআরসি) সেবা দেওয়া হচ্ছে।

তবে চার দিনের এ কনস্যুলার ক্যাম্পে মাত্র ১৩৬ জনকে ই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হবে। একেকটা ই-পাসপোর্ট ডকুমেন্ট স্ক্যানিং ও বায়োমেট্রিকসসহ গড়ে ২০ মিনিট সময় লাগে। দুটি মোবাইল ওয়ার্ক স্টেশনে প্রতিদিন ৩৪ জন করে চার দিনে ১৩৬ জনকে ই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে অনলাইনে ১৩৬ জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে। কেবল তারাই এ ক্যাম্প থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা পাবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

>> ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে

সরেজমিনে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে, সকাল ৮টা থেকে সেবাপ্রার্থীরা জড়ো হয়েছেন ক্যাম্পে। সেবাপ্রত্যাশীদের প্রচুর ভিড়। তারা কনস্যুলার সংক্রান্ত কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পড়েছেন ই-পাসপোর্ট সেবাপ্রার্থীরা। দূতাবাসের সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আবেদনের কারণে সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকে।

কমিউনিটি অ্যাক্টভিস্টরা বলেছেন, মিশিগানে ই-পাসপোর্ট সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা কমপক্ষে আড়াই হাজার হবে। কিন্তু এই ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প থেকে সেবা দেওয়া হবে মাত্র ১৩৬ জনকে। ই-পাসপোর্ট সেবাগ্রহণ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত। যত দ্রুত সম্ভব দ্বিতীয় কনস্যুলার ক্যাম্প স্থাপনের দাবি করেছেন তারা।

>> ই-পাসপোর্ট: আগেই সংশোধন করতে হবে এনআইডি-জন্ম নিবন্ধন

এ প্রসঙ্গে দূতাবাসের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) মুহাম্মদ আবদুল হাই মিল্টন বলেন, নিউইর্য়কের পর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস মিশিগান রাজ্যে। মোবাইল এনরোলমেন্ট কিটের কারিগরি সামর্থ্যের তুলনায় মিশিগান রাজ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রাপ্তির চাহিদা অনেক বেশি। এ কারণে কনস্যুলার ক্যাম্পে সেবাপ্রত্যাশী সকল আবেদনকারীকে ই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে যারা ই-পাসপোর্ট পোর্টালে অনলাইনে আবেদন করেছেন তারা নির্ধারিত তারিখে দূতাবাসে গিয়েও ই-পাসপোর্ট সেবাগ্রহণ করতে পারবেন।


 
তিনি বলেন, ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের তুলনায় কনস্যুলার ক্যাম্পের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টিগোচর করলে তিনি অচিরেই মিশিগানে দ্বিতীয় কনস্যুলার ক্যাম্প পরিচালনার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্ট সাধারণ ডেলিভারি ১১০ ডলার ও এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৬৫ ডলার লাগে। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ ডেলিভারি ৩৩ ডলার ও এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য সাড়ে ৪৯ ডলার ফি প্রযোজ্য। এনভিআর ৫০ ডলার, ডিএনসি ৭৭ ডলার, পিওএ সাড়ে ৮২ ডলার, বিআরসির নতুন ৬ ডলার ও রি-ইস্যুর জন্য ১০ ডলার ফি প্রযোজ্য। তবে ক্যাশ ডলার কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশ দূতাবাসে মানি অর্ডার বা ক্যাশিয়ার চেক অথবা অফিসিয়াল চেক ফি হিসেবে দিতে বলা হয়েছে।

>> যেসব ভুলে ই-পাসপোর্ট পেতে দেরি

মিশিগান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস শুকুর খান মাখন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোতালিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্য বাংলাদেশি বসবাসকারীদের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু এখানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস নেই। প্রবাসীদের কনস্যুলেট সেবা নেওয়ার জন্য ১২/১৩ ঘণ্টা ড্রাইভ করে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসে যেতে হয়। এটা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এখানকার প্রবাসীদের বিড়ম্বনা কমাতে প্রতিবছর বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশিগানের প্রবাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা চালু হয়েছে। মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপনে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট ক্যাম্প স্থাপনে সহযোগিতা করছেন মিশিগান স্টেট আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ চান, মিশিগান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস শুকুর খান মাখন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোতালিব, স্টেট আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মুসা, মিশিগান বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি আহাদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মতিউর রহমান শিমু, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাবেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সুমন কবির প্রমুখ।

ওএফ