করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনে দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বছর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা অস্থিরতা চলছে। দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পর গত সপ্তাহে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশা করছেন, দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও চাঙা হবে। 

করোনার সময়ে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় দেশটির বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তারপরও বছরের বাকি সময়টুকুকে কেন্দ্র করে আশায় বুক বেঁধেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাণিজ্য করতে আসা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই দফায় লকডাউন জারি করা হয়। তবে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে প্রথমবারের মতো টেকওয়ে ও গোসারীশপ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। এছাড়া সিগারেট, কসমেটিক, হার্ডওয়্যার, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক জাতীয় পণ্যের দোকান খোলা ও বিক্রি একেবারে নিষিদ্ধ করেনি দেশটি। কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র অ্যালকোহল বিপণন ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা ছাড়া বাকি সব ব্যবসা-বাণিজ্য বিধি-নিষেধ ও শর্ত মেনে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। ফলে স্থানীয়দের মতো লকডাউনে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

২০২০ সালে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তবে তারা আশায় বুক বাঁধছেন। আশা করছেন করোনাভাইরাসের এ দুঃসময় কেটে যাবে। ২০২১ সালের বাকি সময়টায় ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার সুদিন ফিরবে। 

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি অভিবাসী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় একটি অংশ গোসারীশপ ও টেকওয়ে, হার্ডওয়্যার, কসমেটিক, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘ সময় ধরে। দেশটির জোহানসবার্গ, প্রিটোরিয়া, কেপটাউন, ইস্টার্নপেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করছেন কথা হয় এমন কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে।

তাদের একজন বাংলাদেশি যুবক মুহাম্মদ সাহেদ। তিনি দেশটির ইস্টার্নপেক এলাকায় ছোট একটি দোকান দিয়ে একাই ব্যবসা করছেন। আট বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন মুন্সিগঞ্জের সাহেদ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনে দোকানে বেচাকেনায় কোন প্রভাব ফেলেনি বরং আগের চেয়ে ব্যবসা বেড়েছে। যদিও সরকারের বিধি-নিষেধ সম্পূর্ণ মেনে চলতে হচ্ছে। আমি সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিয়মিত দোকান খোলা রাখছি।

কেপটাউনের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক বলেন, প্রথমবার লকডাউনে সিগারেট বিক্রি বন্ধ হওয়ায় বেচাকেনায় প্রভাব পড়েছিল। প্রতিদিন বিক্রির বড় একটা অংশ সিগারেট থেকে আসতো। কিন্তু তখন সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এ কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছিল। এবার তা হয়নি, এখন তো লকডাউন শিথিল করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য আবার আগের মতো জমবে আশা করছি।

প্রিটোরিয়ায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি কসমেটিকস ও ইলেকট্রনিকস দোকানে দেড় বছর ধরে চাকরি করছেন নাজমুল হাসান রাজ। তিনি বলেন, লকডাউনে আমরা সরকারের নিয়ম-নীতি মেনে দোকান খোলা রেখেছি। এখন লকডাউনে বসে থাকতে হচ্ছে না। প্রথমবার লকডাউনের সময় সারাদিন দোকানের স্টোর রুমে শুয়ে বসে দিন কাটাতে হয়েছিল। তখন মালিক বলেছিল, লকডাউনে যতদিন দোকান বন্ধ, ততদিন বেতন দেবে না। এখন এমনটা আর হবে না।

প্রবাসী এ যুবক বলেন, দেশে মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে এখানে আসি। সেই টাকা এখনও দিতে পারিনি। পরিস্থিতি যাই হোক, কাজ করে দেশে ধার পরিশোধ করতে হবে।

মুঠোফোনে কথা হয় জোহানসবার্গের ব্যবসায়ী রাসেলের সঙ্গে। তিনি জানান, ব্যবসা আগের মতোই আছে। লকডাউনের কারণে বেচাকেনায় তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।

আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন অনেক প্রবাসী।

এসএসএইচ