চীন থেকে করোনাভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে, তখনই ধাক্কা লাগে দক্ষিণ কোরিয়ায়। কিছুদিন পর মহামারিতে ইউরোপের দেশগুলো টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পড়ে। তখন জার্মানিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল লেগে যায়। তবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে দুটি দেশই করোনার ধাক্কা সামলে ওঠে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির সাফল্য শুধু বিশ্ববাসীর নজর কাড়েনি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রশংসার নহর খুলেছিল। এতকিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি দেশ দুটির। নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ায় ও জার্মানিতে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এশিয়ার ড্রাগন দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের ম্যানেজার কান্ট্রি জার্মানি। করোনার কারণে জার্মানিতে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছে ড. অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সরকার। অন্যদিকে সংক্রমণ বাড়ার কারণে কোরিয়ার সরকার বিদেশীদের ২২ মার্চের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছে।

করোনার শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলা, টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো, দ্রুত ও কার্যকর শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার মতো তাত্ক্ষণিক কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। করোনার বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের ওই সময়কার লড়াই বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত হয়েছিল। এখন নতুন করে সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েছে দেশটি।

করোনাভাইরাসের প্রথম থাবায় যখন বিপর্যস্ত ছিল চীন, তখন করোনার দ্বিতীয় আঁতুড়ঘর হিসেবে সামনে আসে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম ধাক্কায় কোরিয়ার পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয় ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেনে। তবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জার্মানি। দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশল অনুসরণ করে সাফল্য পেয়েছে দেশটি- এমনটি ধারণা অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। আসলেই কী তাই? করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোরিয়া যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে, একই পথে কী জার্মানি হেঁটেছে? কোরিয়া সংক্রমণের বৃত্ত ভাঙতে ব্যাপক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে। একই পদক্ষেপ কী জার্মানি নিয়েছে?

অনুসন্ধান বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে কৌশল নিয়েছে জার্মানি। করোনার প্রাদুর্ভাবকে ধীর করার ক্ষেত্রে সাফল্য এনেছে দেশটি। বলা বাহুল্য জার্মানি অন্য যেকোনো ইউরোপীয় দেশের তুলনায় বেশি পরিমাণে করোনা পরীক্ষা করছে। করোনার এ লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র রোগীর সাম্প্রতিক চলাফেরা শনাক্ত করতে স্মার্টফোনে লোকেশন ডেটা ব্যবহার করা। সম্ভাব্য সংক্রমিত লোকদের আরও সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা এবং পৃথক করা। ট্র্যাকিংয়ের কাজটি যেমন কোরিয়া করেছে, তেমনই করেছে জার্মানি। জার্মানির সরকারি কর্মকর্তারা এবং মহামারি বিশেষজ্ঞরা ট্রেস, টেস্ট এবং ট্রিট অনুসরণ করছে, যে কৌশল দক্ষিণ কোরিয়াকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেছে। 

সোমবার (১৫ মার্চ) জার্মানির একটি করোনা পরীক্ষার বুথে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যাপক স্ক্রিনিং এবং রোগীদের নিরীক্ষণের জন্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করেছে জার্মানি। করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে যেমনটি ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিউলের চুন চুং ইয়ং ইউনিভার্সিটি হাসপাতালেও দেখা গিয়েছিল।

করোনা পরীক্ষায় জার্মানিতে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট নেতৃত্ব দিচ্ছে আর কোরিয়ায় দিচ্ছে কোরিয়া সেন্টার ফর কন্ট্রোল ডিজিজ। জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া দুটি আলাদা দেশ। কিন্তু দেশ দুটির ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের কৌশল অভিন্ন। তবে জার্মানি উদারনৈতিক মানবাধিকারের দেশ হওয়ায় অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে করোনা নিয়ন্ত্রণে, তাছাড়া ইইউভুক্ত হওয়ায় যোগাযোগ শিথিল রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রিত করে করোনার লাগাম টানতে সক্ষম হচ্ছে। 

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশ দুটি করোনা রোধে টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট নীতিতে হেঁটেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া নানা সূচকে এগিয়ে থাকলেও বিদেশীদের ২২ মার্চের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করতে বলায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছে। কারণ এতে সামাজিক দূরত্ব তেমন মানা না গেলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

এসএসএইচ