উদীচী যুক্তরাষ্ট্র ও উদীচী স্কুল অব পারফর্মিং আর্টসের যৌথ আয়োজনে গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। জুমে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠান প্রধানত নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণে হলেও কানাডার টরন্টো থেকে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী, উদীচীর উপদেষ্টা ও উদীচী স্কুলের বাংলা বিভাগের প্রধান বেলাল বেগ। এছাড়া উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাধীনতার সব শহীদদের উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘দি বাংলাদেশ কনসার্ট’ এর আয়োজক পণ্ডিত রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসনসহ সব অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে। এরপরেই সভাপতি ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে স্বাধীনতার সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান। 

তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে উদীচীর প্রয়াসের কথা উল্লেখ করে বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে ততদিনই প্রতিবছর এই দিনটিতে আমরা অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব। তবে তাদের প্রতি প্রকৃত অর্থেই সম্মান প্রদর্শন করা হবে যদি আমার একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করতে পারি।

সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পরেই নতুন প্রজন্মের পক্ষে উদিতা তন্বী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলেন, আজকের এই দিনে সবাইকে আহ্বান জানাই, বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস আরও ভালোভাবে জানার জন্য। বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যকে লালন করার জন্য এই বিদেশে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানাই। এর পরেই কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা আবৃত্তি করে উদীচী স্কুলের ছাত্র প্রমিত মহান আচার্য্য।

এরপর ‘দি বাংলাদেশ কনসার্ট’-এর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই ভিডিওচিত্রের পরেই জর্জ হ্যারিসনের ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানের ভাবার্থ নিয়ে নিজের লেখা ও সুরে জীবন বিশ্বাস পরিবেশন করেন ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গান। এর পরেই একে একে বক্তব্য রাখেন বেলাল বেগ, ড. নুরুন্নবী এবং কবি আসাদ চৌধুরী। অত্যন্ত পরিমিত ভাষায় এবং চমৎকার শব্দচয়নে কবি আসাদ চৌধুরী দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশের কথা স্মরণ করেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর উদীচীর সাহসী অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি জীবন বিশ্বাস ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটিরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এরপর একে একে নতুন প্রজন্মের পরিবেশনা শুরু হয়। প্রতীক মোদক পরিবেশন করে গান, অনুপল চৌধুরী পরিবেশন করেন কবিতা, অরিক রহমান পরিবেশন করে গান এবং তৃষা মণ্ডল পরিবেশন করে গান সূর্যোদয় তুমি। ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে স্মরণিকা চক্রবর্তী।

স্মরণিকার নৃত্যের পরে আদিত্য রায় এবং বাঁধন কর্মকার পরিবেশন করে সঙ্গীত। এর পরে নবনীতা চন্দ পরিবেশন করে একটি নৃত্য। নবনীতার পরে দীব্য রায় পরিবেশন করে বিখ্যাত গান ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’। দিব্য রায়ের পরে একক তবলা লহরা পরিবেশন করে দীপ্ত রায়। এর পরে সংগীতা চক্রবর্তী একটি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। এরপর জীবন বিশ্বাসের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় একটি কোরাস গান ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলিম’ এবং তার পরে পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। নৃত্যের পর উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহিত আচার্য্য এবং সহ-সভাপতি তুষার রায় সংক্ষিপ বক্তব্য রাখেন। সবশেষে মুক্তা ধর ও অনামিকা মজুমদারের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়।

অনুষ্ঠানটির ব্যপ্তি ছিল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। সমাপণী বক্তব্য রাখেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় ছিলেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সম্পাদক ও উদীচী স্কুলের প্রিন্সিপাল জীবন বিশ্বাস।

জেডএস