করোনাভাইরাস মহামারি চিরতরে নির্মূল হয়ে ‘নব আনন্দে জাগো’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা নতুন বছর ১৪২৮ কে বরণ করল উদীচী যুক্তরাষ্ট্র এবং উদীচী স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস নিউইয়র্ক। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাস।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সদ্যপ্রয়াত কবরী সারোয়ার, শামসুজ্জামান খান, মিতা হক, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, এস এম মহাসীন, মোরশেদ আলী এবং শফিক চৌধুরী হারুনকে উৎসর্গ করা হয়।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহর। এতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক প্রযোজক ও যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর উপদেষ্টা এবং উদীচী স্কুল অব পারফরমিং আর্টস, বাংলা বিভাগের প্রধান বেলাল বেগ, বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাবেক পরিচালক ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট নাট্যজন ফাল্গুনী হামিদ, প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা মানস বৈদ্য, প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ডা. সন্দীপ গুপ্ত এবং কানাডার প্রবাস বাংলা ভয়েসের প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলসহ আরও অনেকেই।

বক্তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানান।

উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি ড. মো. আব্দুল্লাহ বলেন, শৈশবের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কথা এখনও মনে পড়ে। মহামারীর এই সময়ে সবাই নিয়ম মেনে চলবেন। কোভিড থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছর আরও সুন্দর হবে। নব আনন্দে নব প্রজন্ম জেগে উঠবে- এমনটাই আমার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক প্রযোজক ও যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর উপদেষ্টা এবং উদীচী স্কুল অব পারফরমিং আর্টস, বাংলা বিভাগের প্রধান বেলাল বেগ বলেন, মুক্তির ৫০ বছর পরও স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। তাই এই নববর্ষ আনন্দের নয়। এই নববর্ষ হচ্ছে, প্রয়োজনে আবারও অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার। বাঙালির প্রথম বিপ্লব ছিল জাতীয় পরিচয় পাওয়া।

বিশ্বব্যাপী বাঙালি সংস্কৃতির সঠিক চর্চা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্যোগ মুহূর্তে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। মানবতাবাদী নেতৃত্ব দিতে পারে একমাত্র বাঙালি। তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।

উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাস বলেন, আমরা কঠিন এক সময় পার করছি। করোনা মহামারির এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং সাবধানে থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই আজকের এই আয়োজন।

বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির এক অন্যতম ধারক। কিন্তু গত দুই বছর আমরা তা পালন করতে পারছি না।

বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে নব প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাকে যেমনি তোমরা ভালোবাসো, ঠিক তেমনি দেশকেও ভালোবেসে সংস্কৃতিকে ধরে রাখবে। ইতিমধ্যেই কাছের অনেক মানুষকেই আমরা হারিয়েছি। আর কেউ যেন আমাদের ছেড়ে না যায়।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাবেক পরিচালক ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট নাট্যজন ফাল্গুনী হামিদ বলেন, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির নববর্ষ এমন একটা অনুষ্ঠান যেখানে কেউ বাদ যায় না। আমরা সবাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করি। বৈশ্বিক দুর্যোগ কাটিয়ে করোনা মুক্ত হয়ে সবাই ভালো থাকুক, নববর্ষের এই দিনে এমনটাই আমার প্রত্যাশা।

প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা মানস বৈদ্য তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে উদীচীর এই আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। নতুন প্রজন্মের মাঝে আমাদের সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে- পহেলা বৈশাখে এমনটাই আমার প্রত্যাশা।

বাংলা সংস্কৃতি সত্যি এক অন্যরকম সংস্কৃতি মন্তব্য করে প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম নেতা ডা. সন্দীপ গুপ্ত বলেন, কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের সংস্কৃতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তবুও প্রবাসে থেকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দৃঢ়ভাবে নতুন প্রজন্মের মাঝে এই সংস্কৃতিকে জাগিয়ে রাখতে হবে।

প্রবাসী সাংবাদিক আহসান রাজীব বুলবুল বলেন, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে উদীচীর নববর্ষের এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। করোনা মহামারীর এই দুর্যোগ কাটিয়ে নব আনন্দে জেগে উঠবে পৃথিবী এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উদীচী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা নৃত্য, সংগীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করে।

এমএইচএস