গাজীপুরের মোশাররফ হোসেন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে এসেছিলেন গত বছর মে মাসের শেষের দিকে। দক্ষিণ কোরিয়ায় রি এন্ট্রি কমিটেড কর্মী হিসেবে আবার ফিরে যাবেন সে আশায়। কিন্তু দেশে এসে ১১ মাস ধরে স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঘুরছেন। 

বারবার বোয়েসেলে গিয়ে জানার চেষ্টা করছেন, কখন আসবে কোরিয়ার ডাক। কিন্তু এখনো কোন উপায় খুঁজে পাননি। নিরুপায় হয়ে দিন পার করছেন।

মোশাররফ বলছিলেন, ‘না যেতে পারছি কোরিয়া, না করতে পারছি কোন কাজ-কর্ম। প্রতিদিন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। নতুন করে রি এন্ট্রি চালুর দিন গুনছি। আমার মতো হাজারো কর্মী এই রকম দুশ্চিন্তায় আছেন। আমরা কেউ এক বছর, কেউ ১১ মাস, কেউ ৯ মাস আবার কেউ ৮ মাস ধরে বসি আছি। সবাই জমানো টাকা খরচ করে চলছেন।

আল আমিন নামে এক কোরিয়া প্রবাসী জানান, গত এক বছর ধরে কোরিয়া যাওয়ার জন্য বোয়েসেল ও বাংলাদেশ দূতাবাস সিউলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমার কোম্পানির মালিক আমাকে সে নিতে চায়। তারা আমাদের দেশের সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কবে যেতে পারব, বুঝতে পারছি না। আদৌ আলোর মুখ দেখব কি না জানি না। 

কোরিয়া অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন মোমেন ইয়াং। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কট শুরুর পর বিশ্বব্যাপী সমস্যা শুরু হয়েছে।  যেসব বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী দেশে আটকা পড়েছে তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। এবারের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় অনেকেই আশাহত হয়েছেন। বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা কখন উন্মুক্ত হয় আমার জানা নেই।

কোরিয়ান ইউ জি হু অভিবাসী সেন্টারের টিম প্রধান বাংলাদেশে আটকা পড়া কর্মীদের কী হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশি কর্মীদের কোরিয়া যাওয়ার বিষয়টি করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। ভিসা কার্যক্রম চালু হলে, মালিকরা চাইলে বিশ্বস্ত কর্মীরা আগে কোরিয়া আসতে পারবে। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ তাদের অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তিনি বলেন, বিশেষ  করে যারা এই সময়ে দেশে ছুটিতে এসেছেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তারা আর ফেরত যেতে পারেননি।তাদের বিষয়টি করোনা পরিস্থিতি ও মালিকের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। 

আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী বর্তমানে তাদের পরিবারের নিয়ে বিপন্ন অবস্থায় পড়েছেন। রেমিট্যান্স প্রেরণে দক্ষিণ কোরিয়া ১২তম। অথচ এই দেশের শ্রমখাতের গাফিলতির শেষ নেই।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখের বেশি কর্মী কাজের জন্য বিশ্বের নানান দেশে যান। গতবছর সবমিলিয়ে দেড় লাখের মতো কর্মী বাইরে গিয়েছেন। এর মধ্যে গতবছর পাঁচশর চেয়েও কম কর্মী কোরিয়ায় যান। বিপরীত দিকে মেয়াদ শেষ করে ফেরত এসেছেন এর চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে ছুটিতে এসে এখন আটকে আছেন দেড় হাজার কর্মী। তাদের কোরিয়া যাত্রা আদৌ হবে কি না জানা নেই। আরও  অনেকের কোরিয়া যাত্রা থমকে গেছে। চলতি বছর কোরিয়াতে ১১শ নতুন কর্মী নেওয়ার কথা ছিল। সেটাও থমকে আছে। করোনা পরিস্থিতি পরবর্তী বড় ধরনের সংকট ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, দুবারের নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। কোরিয়া সরকারের আস্থা ফেরাতে মন্ত্রণালয় ও কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস একযোগে কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে। 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইপিএস ভিত্তিক সংগঠন ইকেবেসির উপদেষ্টা ফজলুর রহমান মাসুম বলেন, কোরিয়া প্রবাসী কর্মীদের  বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার যথাযথ কর্মসূচি থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে কোরিয়ার শ্রমবাজার যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেদিকে সবার সুদৃষ্টি দিতে হবে।

ওএফ