ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী রোমানিয়ান শহর তিমিসোয়ারা। শহরটিতে ফুড ডেলিভারি বা ক্রেতাদের পছন্দের খাবার তার পছন্দের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কাজ করেন অনেক বাংলাদেশি। এসব বাংলাদেশিদের কেউ কেউ লাখ টাকা খরচ করে এসেছেন সেখানে। আবার উচ্চশিক্ষার জন্য আসা কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে নিজেদের যুক্ত করেছেন এ পেশায়।

তিমিসোয়ারায় জীবিকার সন্ধান আর উচ্চশিক্ষার জন্য আসা এসব বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্গে কথা বলেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।

বছরখানেক আগে কুমিল্লা থেকে এসেছেন মো. ইমরান খান। একটি এজেন্সির মাধ্যমে তিমিসোয়ারা পর্যন্ত আসতে এই তরুণকে গুনতে হয়েছে আট লাখেরও বেশি টাকা।

এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে কিছু করার সুযোগ থাকলেও ইউরোপের স্বপ্নেই রোমানিয়ায় পাড়ি জমান ইমরান। তবে এত অর্থ খরচ করে এসে ফুড ডেলিভারির কাজ করলেও আক্ষেপ নেই তার কণ্ঠে।

বরং সার্বিক পরিবেশ, পরিস্থিতি আর স্থানীয়দের আচরণে সন্তুষ্ট এই তরুণ। তিনি বলেন, মানুষ অনেক সুন্দর, মানুষ ভালোভাবে ব্যবহার করে, কথা বলে। ওদের আচরণ অনেক ভালো। তাই ভালো লাগে।

ভিনদেশি একজন হিসেবে কখনো বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে ইমরান বলেন, ওরা সবাই ফ্রেন্ডলি, ফ্রেন্ডলিভাবে কথা বলে সবাই।

চার শতাধিক বাংলাদেশি তিমিসোয়ারা শহরে ফুড ডেলিভারি পেশায় নিয়োজিত বলে জানান ইমরান। তিনি প্রতিদিন ১১ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করেন। এতে তার আয় হয় এক হাজার তিনশ থেকে চার লিও (রোমানিয়ার মুদ্রা)। যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ হাজার টাকার সমপরিমাণ।

তবে তিমিসোয়ারা শহরে জীবন ধারণের জন্য প্রতি মাসে সব মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার লিও খরচ হয় বলে জানান ইমরান।

তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জীবন ধারণের ব্যয় এই তুলনায় অনেক কম। মাস তিনেক আগের কথা। ঢাকার দোহার থেকে শিক্ষার্থী ভিসায় উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছেন শাহাদাত হোসেন। ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন তার লক্ষ্য।

শিক্ষার্থী ভিসায় খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্টুডেন্ট হিসেবে ওইরকম কোনো খরচ হয়নি। ভার্সিটির এক বছরের টিউশন ফি দুই হাজার ইউরো আর বাংলাদেশে যেহেতু রোমানিয়ান অ্যাম্বাসি নেই, তাই ইন্ডিয়া গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে।

এ কারণে আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। সঙ্গে রোমানিয়া পর্যন্ত বিমান ভাড়ার খরচ তো আছেই।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চশিক্ষার জন্য রোমানিয়া কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য না হলেও শাহাদাতের আগ্রহের পেছনে রয়েছে ভিন্ন এক যুক্তি। তিনি জানান, দেশটিতে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় পড়াশোনার খরচ অনেক কম।

তিনি আরও বলেন, লিভিং কস্ট অনেক কম। দুইশ ইউরো যদি খরচ করেন সুন্দরভাবে থাকা খাওয়া সম্ভব।

শিক্ষার্থী ভিসায় আসার কারণে পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন বলেও জানান শাহাদাত। ফুড ডেলিভারি পেশায় খণ্ডকালীন কাজ করেন এই শিক্ষার্থী। বলেন, আমি যখন ফ্রি থাকি এই কাজটা করি। এই কাজের মাধ্যমে আমার ভার্সিটির খরচসহ, লিভিং কস্ট দিয়েও আমার হাতে কিছু টাকা থেকে যায়।

বাংলাদেশিদের জীবনধারা, অনেক বাংলাদেশির রোমানিয়া ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা নিয়েও নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শাহাদাত। তার মতে, বেশি অর্থ উপার্জনের আশায় বাংলাদেশিদের অনেকে সেন্ট্রাল বা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে চান। আবার কেউ কেউ নিরুপায় হয়েও এ পথ বেছে নেন বলে জানান তিনি।

শাহাদাত বলেন, কিছু বাঙালি দালাল আছে। তারা বলে যে, এখানে আসার পর কিছু কাজ আছে।৷ কিন্তু বাঙালিরা এসে দেখে যে কোনো কাজ নেই। তার মালিক নেই, কোম্পানি নেই, কিছু নেই। অনেকের ক্ষেত্রে হাতে কোনো উপায় থাকে না এখানে থাকার। আবার অনেকের হাতে কাজ থাকার পরও টিআরসি (অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি) থাকার পরও তারা চলে যায়। পরে আরও ভালো কিছু করার জন্য হয়ত, আমি আসলে জানি না কি হয়।

আবার কেউ কেউ প্রলোভনের ফাঁদে পড়েন বলেও জানান এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। বলেন, এখানে কিছু লোক আছে, যারা প্রলোভন দেখায়। তাদের কাজই হচ্ছে এখান থেকে ওখানে ট্রান্সফার করা। মাঝে তারা একটি কমিশন পায়।

সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস

এসএসএইচ