লন্ডনে কমিউনিটি দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের নেতারা মেয়র পদ্ধতির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছেন। কমিউনিটির স্বার্থে যেকোনো মূল্যে মেয়র পদ্ধতিকে ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ৬ মে মেয়র পদ্ধতির পক্ষে ভোট দিয়ে কমিউনিটির স্বার্থবিরোধী চক্রান্তের জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান কমিউনিটি নেতারা।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে ‘কমিউনিটি ক্যাম্পেইন ফর মেয়রাল সিস্টেমের (সিএমএস) উদ্যোগে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানানো হয়।

ইয়েস মেয়র ক্যাম্পেইনের পক্ষ থেকে এই প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিউনিটি নেতারা বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে কমিউনিটির অর্জন মেয়র পদ্ধতি। জনগণের সেই অর্জিত ক্ষমতা কেড়ে নিতেই কাউন্সিলরদের উদ্যোগে এই রেফারেন্ডাম। জনগণের মেয়র নির্বাচনের ক্ষমতা কেড়ে নিতে বিবদমান টোরি-লেবার একাট্টা হয়েছে। তাই জনগণকেও তার ভোটের ক্ষমতা ধরে রাখতে অতীতের মতোই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে কমিউনিটি নেতারা বলেন, ব্যক্তির ভুলের জন্য পদ্ধতি কেন বদলাবে? তারা ব্যক্তিকে ঠেকাতে গিয়ে বাঙালিদের মেয়র হওয়ার পথ আজীবনের জন্য রুদ্ধ করে দিতে চায়। তারা টাওয়ার হ্যামলেটকে বাঙালি শূন্য করতে চায়। টাওয়ার হ্যামলেটে আমরা দুর্বল হলে মূলধারার রাজনীতিতেও আমরা দুর্বল হতে থাকব।

সিএমএস চেয়ার ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. হাসনাত এম হোসাইন এমবিই ও টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক ডেপুটি মেয়র এম ওহিদ আহমেদ মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। 

তারা বলেন, লন্ডনের বাসিন্দারা যেদিন লন্ডন মেয়রের জন্য ভোট দেবেন, একই দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটারদের মেয়র পদ্ধতি তুলে দেওয়ার প্রশ্নে ভোট দিতে বলা হচ্ছে। এটা হিপোক্রেসি। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাহী মেয়র নির্বাচনের এই পদ্ধতি টাওয়ার হ্যামলেটের জনগণ ২০১০ সালে তাদের দাবিকৃত রেফারেন্ডামের মাধ্যমে অর্জন করেন। সে সময় ২০ হাজার ভোটার রেফারেন্ডামের দাবিতে পিটিশন দিয়েছিল। আর ৬০ হাজারের বেশী ভোটার মেয়র পদ্ধতির পক্ষে ভোট দিয়ে এই পদ্ধতি অর্জন করেন। জনগণের সেই অর্জনকে নির্বাহী ক্ষমতাবলে (অন্য অর্থে গায়ের জোরে) বাতিল করতে ৬ মের রেফারেন্ডাম।

টাওয়ার হামলেটে বাঙালি কমিউনিটি এক তৃতীয়াংশের বেশি হওয়ায় যে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছিল তা বিনাশের উদ্যোগকে কমিউনিটি ইতোমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের সমর্থন না পেয়ে কৌশল আর চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন তারা। ৪ বছরের জন্য তারা লিডার চান, মেয়র চান না। কারণ তারা নিজেরা লিডার নির্বাচন করবেন, আর মেয়র নির্বাচন করবেন সরাসরি জনগণ। জনগণের ক্ষমতা কাউন্সিলররা নিজ হাতে কেড়ে নিতে চান। 

লিখিত বক্তব্যে প্রশ্ন করা হয়, কাউন্সিলররা কেন জনগণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিতে চান, আবার গণতন্ত্রের দোহাই দেন। এটা পরস্পরবিরোধী। জনগণ লন্ডন-নিউইয়র্ক-ঢাকা-সিলেটসহ সব মেয়র পদ্ধতির মতো টাওয়ার হ্যামলেটেও নিজেরাই ভোট দিয়ে কার্যকর ও ক্ষমতাধর স্থানীয় সরকার (মেয়র) নির্বাচিত করবে।

টাওয়ার হামলেটসের জনগণের এই অর্জন কোনোভাবেই ছিনতাই হতে দেওয়া যাবে না। অপর এক প্রসঙ্গে নেতারা বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস বিশ্ব বাঙালির প্রাণকেন্দ্র। বাঙালির দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে খ্যাত। টাওয়ার হ্যামলেটের বাঙালিদের সব সংকটে সকলে ঐক্যবদ্ধ। বিশ্ববাঙালির এই ভালোবাসাকে যারা ‘বহিরাগত’ বলে সমালোচনা করেন, তারা প্রমাণ করেন কমিউনিটির স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থই মুখ্য। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিউনিটির সব মত ও পথের নেতাদের মধ্যে মেয়র পদ্ধতি সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কমিউনিটির প্রবীণ নেতা শামসুদ্দিন খান, দুই বারের নির্বাচিত সাবেক নির্বাহী মেয়র লুৎফর রহমান, মাহিদুর রহমান, ড. ওয়ালী তসর উদ্দিন, প্রফেসর আব্দুল কাদের সালেহ, বিবিসিসি সভাপতি বশির আহমেদ ও সাবেক সভাপতি মাতাব চোধুরী।

আরও বক্তব্য রাখেন- সাংবাদিক আবু তাহের চৌধুরী, নিউক্যাসল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ার মাহতাব মিয়া, বাংলাদেশ সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইউকে চেয়ার মুহিবুর রহমান মুহিব, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতালের ট্রাস্টি শাব উদ্দিন, মাওলানা শুয়েব আহমেদ, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন প্রমুখ। 

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি এমাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের ও সাপ্তাহিক জনমতের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সৈয়দ আফসার উদ্দিন, রহমত আলীসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। তারা বিভিন্ন প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন।

গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের চেয়ার ব্যারিস্টার আতাউর রহমান ও মীর্জা আসহাব বেগ, ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজের ভাইস চেয়ার আব্দুল লতিফ জেপি, ব্রিটিশ কারী অস্কারখ্যাত কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এনাম আলী, বিজনেস চেম্বার লিডার ও কনজারভেটিভ পার্টি সংগঠক মুকিম আহমেদ, মসজিদ কাউন্সিল চেয়ার মাওলানা শামসুল হক মেয়র পদ্ধতির প্রতি তাদের সর্বাত্মক সর্মথনে ইতোপূর্বে বিবৃতি প্রদান করেছেন।  

এছাড়া বৃটিশ বাংলাদেশ কলেজ লেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যাক খান ও টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিরাজুল বাসিত চৌধুরী, ইউরোপের  টাওয়ার হ্যামলেটে ইতালি ও পর্তুগাল থেকে আগত কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে শাহ আলম কাজল, ইউসুফ তালুকদার, আবুল হোসেন জসিম প্রমুখ তাদের নিজ নিজ কমিউনিটির পক্ষ থেকে মেয়র পদ্ধতির পক্ষে তাদের জোরালো সমর্থনের কথা জানান।

ওএফ