পর্তুগালের কৃষি অধ্যুষিত অঞ্চল বেজার প্রধান শহর অদিমেরা মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র জোসে আলবার্তো অদিমিরার বেশকিছু কর্মক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত কর্মচারীর উপস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রোববার (২ মে) মিউনিসিপ্যালিটির টাস্কফোর্স মিটিং শেষে সাংবাদিকদের এ শঙ্কার কথা জানান তিনি।

তিনি জানান, ২০০ বর্গমিটার একটি সুপার মার্কেটে অফিসিয়ালি ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মচারী রয়েছে, যা আয়তন অনুযায়ী কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে কিছু পানীয় বিক্রয়ের নির্ধারিত স্থান রয়েছে, সেখানে সাধারণের চেয়ে ১০ গুণ বেশি কর্মচারী রয়েছে। আর এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন সবাই অভিবাসী।

তিনি আরও যোগ করেন, আরও একটি উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশিরভাগ লেনদেন হয় নগদ অর্থে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব যে আপনি একটি গাড়ি এবং একটি বাড়ি কিনবেন সম্পূর্ণ নগদ অর্থের বিনিময়ে।

মেয়র দু’বছর আগে এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আহ্বান করেছিলেন। রোববারে টাক্সফোর্স মিটিংয়ে পর্তুগালের (পুলিসিয়া জুডিসিয়ারিয়া) বিচার বিভাগীয় পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। মেয়র আরও জানান, এ ধরনের অধিকাংশ কোম্পানি সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ না করে উধাও হয়ে যায়। তাদের পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া যায় না।

পর্তুগালের এই অঞ্চলটিতে বেশকিছু বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাই বাংলাদেশিদের অবস্থা জানতে পর্তুগালে নব্বইয়ের দশক থেকে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পর্তুর সভাপতি এবং পর্তুগিজ ক্ষমতাসীন সোশ্যালিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত শাহ আলম কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, এ ধরনের অনেক অভিযোগ আমরা ইতোমধ্যে শুনেছি। এটি সত্যিই আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। পর্তুগাল সরকার প্রবাসীদের প্রতি সহজ মানসিকতা এবং মানবিক কারণে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো কঠিন পদক্ষেপ নেয়নি। সুতরাং বৃহৎ স্বার্থে আমাদের এই বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও গ্রেটার নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশন অব পর্তুগালের সভাপতি হুমায়ুন কবির জাহাঙ্গীর জার্মানি, স্পেনে ব্যবসা করেছেন। তিনি বর্তমানে পর্তুগালে ব্যবসা করছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে জানান, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং নানাভাবে জানতে পেরেছি দক্ষিণ এশিয়ার এবং দক্ষিণ আমেরিকার দুএকটি দেশের লোকজন এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত। তবে মাঝে মধ্যে বাংলাদেশিদের মধ্য থেকেও দুই একটি ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি। তবে আশা করব অন্যান্য দেশের লোকজন যাই করুক না কেন, আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা মাতৃভূমি বাংলাদেশের সুনাম অক্ষত রাখার জন্য পর্তুগালের আইনকে শ্রদ্ধা করে সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন। সকল অনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকবেন।

পর্তুগালের পুরো দেশ যখন স্বাভাবিক জীবনের দিকে হাঁটছে, তখন অদিমিরা মিউনিসিপ্যালিটি উচ্চ করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় শতভাগ লকডাউনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে নিজ গৃহে অবস্থান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের আলোচনায় বিষয়গুলো উঠে আসে, যা পর্তুগালে বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য একটি মারাত্মক অশনি সংকেত।

এসএসএইচ